ভারত বায়োটেকের টিকার ‘তড়িঘড়ি অনুমোদন’ নিয়ে তীব্র উদ্বেগ, সমালোচনা

0
26
ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে

ভারতে একটি কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহারে ট্রায়াল সম্পূর্ণ হবার আগেই যেভাবে সরকারি অনুমোদন দেয়া হয়েছে – তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোভ্যাক্সিন নামের এই টিকাটিকে ভারতে সরকারি অনুমোদন দেয়া হয় রোববার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর পর ঘোষণা করেন, এই টিকা হবে এক ‘গেম-চেঞ্জার’।কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে এর অনুমোদন দেবার প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ড্রাগ এ্যাকশন নেটওয়ার্ক বলেছে, ব্যাপারটায় তারা ‘স্তম্ভিত।’প্রতিষ্ঠানটি বলছে, টিকাটি কতটুকু কার্যকর সে ব্যাপারে কোন উপাত্ত নেই এবং এ ব্যাপারে স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে – যা গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

“এর ফলে উত্তরের চেয়ে বেশি প্রশ্ন তৈরি হবে এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা বাড়বে না।” এই বিবৃতির আগে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ভি জি সোমানি জোর দিয়ে বলেন, কোভ্যাক্সিন ১০০% নিরাপদ এবং এটা মানবদেহে শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিনটি সীমিত ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে এবং “এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্য সব টিকার মতই – যেমন সামান্য জ্বর, ব্যথা এবং এ্যালার্জি।”

কিন্তু অল ইন্ডিয়া ড্রাগ এ্যাকশন নেটওয়ার্ক বলছে, যে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে তাকে এভাবে অনুমোদন দেবার বৈজ্ঞানিক যুক্তি তারা বুঝতে পারছেন না। ভারতের অগ্রগণ্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একজন ড. গগনদীপ কাং বলেন, এরকম ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেননি।

তিনি বলেন, এ টিকাটির কার্যকারিতা কতখানি সে ব্যাপারে কোন উপাত্তই নেই যা প্রকাশ বা উপস্থাপন করা হয়েছে।

জনগণের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন

সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে বলেন যে ট্রায়াল সম্পন্ন হবার আগে টিকা অনুমোদন করে দেয়াটা উদ্বেগজনক – এমনকি পরে যদি এটা কার্যকর বা নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয় তাহলেও।

সামাজিক মাধ্যমেও ভারত বায়োটেকের টিকা অনুমোদন নিয়ে বিতর্ক চলছে
ছবির ক্যাপশান,সামাজিক মাধ্যমেও ভারত বায়োটেকের টিকা অনুমোদন নিয়ে বিতর্ক চলছে

দিল্লি থেকে বিবিসির বিকাশ পাণ্ডে জানাচ্ছেন, ভ্যাকসিনটির উদ্ভাবক ভারত বায়োটেক বলছে টিকাটির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়ালে ভালো ফল পাওয়া গেছে, সরকারি কর্তৃপক্ষও একে নিরাপদ ও কার্যকর বলে মত দিয়েছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু টিকাটির কার্যকারিতার উপাত্তগুলো অন্য বৈজ্ঞানিকদের যাচাই করে দেখার জন্য প্রকাশ করা হয় নি – সেটাই এ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিকাশ পাণ্ডে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই কোভ্যাক্সিনকে “আত্মনির্ভর ভারতের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত” বলে বর্ণনা করেছেন কিন্তু টিকাটি নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠছে তা এ প্রচারণার জন্য অনুকুল হবে না। তা ছাড়া অনেকের মতে সরকারকে টিকা অনুমোদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আরো স্বচ্ছতা দেখাতে হবে, কারণ কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য নির্ভর করছে জনগণের আস্থার ওপর।

রাজনীতিবিদরাও বিতর্কে জড়িয়েছেন

রোববার টুইটারে সরকারের মন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই কোভ্যাক্সিনকে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দেয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়।

ভারত নিজেই এই টিকা তৈরি করেছে কিন্তু এ সাফল্যের প্রশংসা করতে বিরোধী নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাদের সমালোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। কিন্তু যেভাবে এ টিকা অনুমোদন করা হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শশী থারুর ও জয়রাম রমেশের মত কংগ্রেস-নেতারা, এবং উত্তর প্রদেশ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে