করোনা কালে নাবিকের সমুদ্রযাত্রা : ৪

0
48
করোনা কালে নাবিকের সমুদ্রযাত্রায় ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

করোনার প্রান কেন্দ্রে: ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ: ১২ সেপ্টেম্বার, ২০২০।

গত রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। কিন্তু ঘুম ভেঙে গেল রাত ৩টার দিকে। ১১ ঘণ্টার জেট ল্যাগ কাটিয়ে উঠতে সময় নেবে সন্দেহ নেই। শুয়ে শুয়ে বাড়ির কথা ও দেশের কথা ভেবে মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরছে আমি এসেছি দেখে এক ব্যাক্তি চার মাসের জায়গায় আট মাস কাটিয়ে দেশে ফিরতে পারছে, আমার বিষন্নতার তুলানায় তার আনন্দ অনেক বেশী। এসব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জেগে উঠলাম দরজায় কারো করাঘাতে।

তাড়াহুড়ো করে দরাজা খুলে দেখি কেউ নেই, তবে একটি পলিথিন প্যাকেট পরে আছে মেঝেতে, সকালের নাস্তা। ভেতরে নিয়ে এলাম, গতকাল রাতের অর্ডার মত ডিমের স্ক্র্যাম্বল, ইয়োগার্ট, কফি, সসেজ রেখে গেছে। রাত জেগে ক্ষুধাও বেড়ে গিয়েছিল, সব চেটেপুটে খেয়ে নিলাম আর বুঝে গেলাম যে কদিন থাকি এরকমই ঘটবে, শুধু কড়া নেড়ে বাইরে খাবার রেখে যাবে যে ভাবে চিড়িয়াখানার জন্তুদের খাবার দেয়া হয়। এরকম অভিজ্ঞতা হয়তো জীবনে কখনোই আর হবে না। যা হোক খাবারতো দেয়া হচ্ছে, করোনার পেছনের সারির সহযোদ্ধা হিসেবে এটাই কম কিসে?

ডিসেম্বরে করোনা আত্মপ্রকাশ করেছিল চীনের ইউহান প্রদেশে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে WHO এবং চীন একে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। ভুটান, ভিয়েতনাম, মালায়শিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের মত দুর্বল দেশগুলো ভয়ে কাপতে শুরু করল, বন্ধ করে দিল সীমান্ত। আর চীন তো ভয়ে মৃত্যু শয্যায়, তারা এমনকি নিজ দেশের আন্তঃবিভাগীয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। বাংলাদেশ, এমেরিকা, ভারত কিংবা ব্রাজিলের মত শক্তিশালী দেশগুলো বুক চিতিয়ে বীরের মত দাড়িয়ে রইল……আয় দেখি তোর কত বড় বুকের পাটা।

মার্চের প্রথম অংশে বিশ্বের অনেক দেশ যখন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে, তখন বাংলাদেশ বীরের মত লড়ছে, করোনার বিরুদ্ধে নয়, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে, মিরপুর স্টেডিয়ামে। করোনার চেয়ে বস মাসরাফি অনেক গুরুত্বপুর্ন, তাকে তো আনুষ্ঠানিকতার সাথে বিদায় দিতেই হবে। ট্রাম্প সাহেব তখনও তার হাস্যরসাত্বক টুইট চালিয়ে যাচ্ছেন আর ব্রাজিল জানিয়ে দিল তারা ফুটবল নেশন, করোনা তাদের কিছু করতে পারবে না। ঢাকায় তখন ফুটবল লীগ চালুর চিন্তা ভাবনা করছেন ফুটবল বিশ্বের মুকুটবিহীন সম্রাট বাফুফে সভাপতি, কারন ২০২২ সালের বিশ্বকাপে তো খেলতেই হবে।

স্কুল কলেজ চলছে পুরোদমে। মার্চ এর ১৪ তে যেদিন আমি বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দিলাম, সেদিন রাতে খবরে দেখালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হার ৩০% এ নেমে এসেছে। স্কুল থেকে মেসেজও দেয়া হল যাতে স্কুল পাঠানো বন্ধ করা না হয়। আমরা বীরের জাতি, জাতীয় বীরকে আনুষ্ঠানিক সম্মান জানাতে হবে, এর আগে কোন মতেই সামান্য করোনার ভয়ে গুটিয়ে গেলে চলবে না। যা হোক ভুটান বাংলাদেশের বিমান ঢুকতে দেবেনা বলায় বিমানের প্রথম রুট বন্ধ হল, অভিবাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেনা দেখে স্কুল বন্ধ করা হল। অনেকটা এরশাদ সময়কার পরিস্থিতি, হরতাল ডাকলে এরশাদ সাহেব ছুটি ঘোষণা করে দিতেন।

আমাদেরও তাই হলো, সরকার বাহাদুর অনেক চেষ্টা করেছিলেন ১৭ মার্চ পর্যন্ত সব স্বাভাবিক রাখতে, কিন্তু ভীতু বাঙ্গালীর জন্য সাহসী প্রচেস্টা ব্যার্থ হলো। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর, পৃথিবী লাটিমের মত প্রায় ১৮০ বার নিজের অক্ষের উপর ঘুরেছে, আর বিশ্ব সাক্ষী হয়েছে এক অভুতপুর্ব টালমাটাল অবস্থার, যা সাইন্স ফিকশন মুভিতেও কখনো দেখানো হয় নি। এমেরিকার প্রতিদিনের কাজ ছিল চীনের পেছনে কয়টি ফুটো হল তা গুনে দেখা, ইউহানে কতজন মারা গেল, কত লাস গুম করা হল, কবে ভাইরাস কোন ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে বিদেশে এক্সপোর্ট করা হল এসবের গবেষনা। একদিন ট্রাম্প লক্ষ্য করলেন, চীন নামক বড় হাড়ির তলা দিয়ে কোন পানি পরছে না? কেন পরছে না? চোখে সমস্যা? ট্রাম্প সাহেব দ্রুত ডাক্তার ডাকলেন, ডাক্তার চোখ দেখে বললেন সব ঠিক আছে। তাহলে? হয়তবা বাইনোকুলারের সমস্যা, নো চিন্তা। নাসা কে দিয়ে হাবল টেলিস্কোপ মহাশুন্য থেকে নীচে নামিয়ে আনা হল, বসানো হল হোয়াইট হাউসের ছাদে।

ছাদে বসে হাবল টেলিস্কোপে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলেন চীনের দিকে। নাহ, এক ফোটা পানিও পরতে দেখছেন না, কিন্তু তার পা পানিতে ডুবে যাচ্ছে! চীনের তলা দিয়ে পানি পরছে না তাহলে এত পানি আসছে কোথা থেকে? চিৎকার করে উঠলেন ট্রাম্প। ইভাঙ্কা ট্রাম্প সাহেবের কাধে আলতো স্পর্শ করে বললেন, “বাবু, এ পানি হোয়াং হো নদীর বন্যার পানি নয়, তোমার ডায়পার লিক করছে অনেকদিন থেকে, কিন্তু তুমি গন্ধ পাচ্ছোনা”করোনা নিয়ে হাসি তামাশার এমেরিকা এখন করোনার চারণভূমি। মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যায় সবাইকে ছাপিয়ে এমেরিকা এখন চ্যাম্পিয়ন, আনুপাতিক হারে স্পোর্টিং নেশন ব্রাজিল এবারও কাপ মিস করে রানার্স আপ। আর সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে আমি পৌছালাম বিশ্ব করোনার কেন্দ্রস্থল এমেরিকাতে, কারন জাহাজে চড়তে হবে।

করোনাকালে যখন পৃথিবীর একটি গাড়িও চলেনি, যখন একটি বিমানও আকাশে উড়েনি, সমস্ত স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, অফিস আদালত, বিউটি পার্লার, জিমনেসিয়াম, স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব বন্ধ, তখনও কোন জাহাজ থেমে থাকেনি, একজন নাবিকও আধা বেলা ছুটি পায় নি। বরঞ্চ কালে ভদ্রে পোর্টে গিয়ে বাইরে ঘুরতে যাবার যে সুযোগ ছিল, তা হয়ে গেছে বন্ধ। গত ছয় মাসে অনেক নাবিকের প্রিয়জন ছিল মৃত্যুশয্যায়, তার পরেও দেশে ফেরার উপায় ছিলনা। বিমান চলাচল বন্ধ, অনেক দেশেই বাইরের লোক ঢুকা নিষেধ, এমন অনেক নিয়মের বেড়াজালে নাবিকরা আটকা পড়েছে আধুনিক কারাগারে, কাজ করেছে দিনরাত অহর্নিশি। সারা পৃথিবীতে যখন এভরি ডে সান ডে, নাবিকদের জন্য তখন ২৪ ঘন্টা মান-ডে। করোনা দুর্যোগে সম্মুখ সমরের যোদ্ধা ছিল স্বাস্থ্যকর্মিরা। তারা অনেক ক্ষেত্রেই সাত দিন বা ১৪ দিন টানা ডিউটি করেছে। কিন্তু তার পর? তারপর ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইন, হয়ত সাত দিন বাসা, আবার ডিউটি।

একেক দেশের সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের থাকার বন্দবস্ত করেছে, কেউ পেয়েছে ১ তারকা, আবার কেউ পাঁচ তারকা। স্বাস্থ্যবিধির কারনে অনেক ডাক্তার, যেমন ডেন্টিস্টদের বন্ধ রাখতে হয়েছে তাদের কার্যক্রম। এমনকি দেশের সরকার প্রধানরা হোম-অফিস করেছে কিংবা এখনও করছে। আর নাবিকরা? তারা ২০১৯ সালে যত ঘন্টা কাজ করছে, ২০২০ সালেও তাই করেছে। মাঝখানে অবশ্য কিছু বোনাস পেয়েছে। যেমন স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে বা পনের দিনে একবার মাটিতে পা রাখতে পারত, বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে আসতো, গত ছয় মাসে তা সম্পুর্ন বন্ধ, কোন নাবিক মাটিতে পা রাখেনি। খাবার দাবারের সরবরাহ হয়েছে বিঘ্নিত, সুযোগ সুবিধা হয়েছে ব্যাহত, আর বাড়ি ফেরার আহাজারি তো রয়েছেই। কভিড উপলক্ষ্যে কেউ এক ঘন্টার জন্য ও বিশ্রাম পায় নি, হোম অফিস তো দুরের কথা।

বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে দেখা করার জন্য সরকারপ্রধান গিয়েছেন, কোথাও একজন নার্স বাসায় ফেরার পথে লোকজন “হিরো” লেখা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কোথাও এলাকার লোকেরা খাবার নিয়ে হাসপাতালে দিয়ে গেছে। আর এদিকে আন্তর্জাতিক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন শুধু অনুমতি চেয়েছে নাবিকদের জন্য যাতে নিয়ম সিথিল করা হয়। তাদের যেন শুধু বাড়ি ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করা হয়, কৃতজ্ঞ সরকার প্রধানরা কারো কথা শুনেনি। জাহাজ আসতে হবে পন্য নিয়ে, কিন্তু নাবিকরা বাড়ি যেতে পারবে না। চার মাস চুক্তির নাবিকেরা আটকে ছিল আট মাস, কেউ এখনও আটকে আছে, কারন অনেক দেশ এখনও নাবিকদের উঠানামার সুযোগ বন্ধ করে রেখেছে। ট্রাম্প কে নিয়ে কিছুটা হাস্যরস করেছি, কিন্তু সত্যতা হল এমেরিকাই একমাত্র দেশ যারা নাবিকদের দিকে সহযোগিতার হাত বারিয়ে দিয়েছে, সব চেয়ে সহজ শর্তে নাবিক উঠানামার ব্যাবস্থা করেছে, এজন্য ট্রাম্প তথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবশ্যই অভিবাদন প্রাপ্য।এখন প্রশ্ন জাগতে পারে নাবিকদের সহযোগিতা করার কি আদৌ প্রয়োজন আছে? ঢাকা শহরের একজন প্রায়াত সাংসদ বলেছিলেন, ডঃ কামাল হোসেন কিসের ডাক্তার? কয়জন রোগীর চিকিৎসা করছে? ডাক্তার হইল আমার পোলা, শত শত রোগীর চিকিৎসা করে। তিনি বেচে থাকলে হয়ত একই কথা বলতেন, নাবিকরা কি করেছে? চাকরী করছে বেতন পাইছে, সমস্যা কি? আসলে পৃথিবীর পন্য বানিজ্যের ৯০% ভাগ চলাচল করে সাগর পথে।

অধিকাংশ মধ্যম সারির দেশেরই পন্য মজুদ থাকে বড়জোর ছয় মাসের। অনেক সময় জ্বালানী মজুদ থাকে মাস তিনেকের। যদি জাহাজ বন্ধ হয়ে যায়, পৃথিবীর অনেক দেশে বাতি জ্বলবে না, গাড়ির চাকা ঘুরবে না, চুলা জ্বলবে না, কিংবা চুলা জ্বললেও তাতে রান্না করার মত চাল ডাল থাকবে না। বাংলাদেশে আমরা হয়ত খাদ্য দ্রব্যে স্বয়ংসম্পুর্ন, কিন্তু জ্বালানী, সহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই আমদানির উপর নির্ভরশিল। ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, শুধু এ খবরেই কাচা বাজার টালমাটাল হয়ে গিয়েছে। এবার চিন্তা করুণ পৃথিবীর সব দেশ যদি রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তাহলে কি অবস্থা হবে পৃথিবীর? জাহাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে পৃথিবী ব্যাপী আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই মহামারির সময় সব কিছু যখন বন্ধ ছিল, লাখ লাখ নাবিক সবার অজান্তে পৃথিবীর চাকা চালিয়ে রেখেছে। তাদের জন্য কেউ একটি ব্যানার তুলে ধরেনি, কেউ লিখেনি একটি কবিতা, কারও চোখে ঝরেনি এক ফোটা জল। বরঞ্চ যেসব দেশের জরুরী পন্য পরিবহণ করে নিয়ে গিয়েছে, সে দেশই তার সাথে কয়েদীর মত আচরন করেছে।

তোমরা আসো, আমাদের সাপ্লাই দিয়ে যাও, কিন্তু তুমি নমশূদ্র, আমার মাটিতে তোমার পা ফেলার অধিকার নেই।এমেরিকার বদান্যতায় আমি আসতে পেরেছি জাহাজে যোগ দেবার জন্য। আরেকজন বাড়ি যেতে পারছে তিন মাস অতিরিক্ত সময় কাটিয়ে। শেরাটন হোটেলের সেই আতিথেয়তা না থাকলেও অন্তত কেউ আমার দিকে অস্পৃশ্যের মত তাকাচ্ছে না। শুধু ভালো খাবার দিতে পারছে না, কিংবা রুম পরিস্কার করছে না, বাকি সব আগের মত। হিউস্টনে বন্ধু পুলক থাকে, ফোনে কথা হয় বা মেসেঞ্জারে আলাপ হয়, কিন্তু হিউস্টনে কখনো ওর সাথে দেখা হয়নি। ভাবলাম আজকের দিন ফ্রি, সুতরাং ওকে খবর দেই। মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়ে রাখলাম, কিন্তু ওকে এক্টিভ দেখা গেল না। ফোনবুকে ওর নাম্বারও খুঁজে পেলাম না, কিছুই করার নেই অপেক্ষায় থাকতে হবে কখন ও যোগাযোগ করে।

চীফ ইঞ্জিনিয়ার ইগর এসে বলল “ক্যাপ্টেন, একটু বাইরে যেতে হবে, আমার সিম কাজ করছে না, শুধু এটিএন্ডটি এর সারভিস সেন্টারে যাবো আর আসব, ম্যাক্সিমাম আধা ঘন্টা”। বলে দাঁড়িয়ে রইল। এজেন্ট ফোন করলে আমার সাথে কথা বলবে এবং সেটা যেকোন সময়েই ঘটতে পারে। বললাম যাও কিন্তু ৩০ মিনিটের বেশী দেরী করোনা। দ্রুত চলে গেল ইগর, যাবার সময় বলে গেল আমার জন্যও একটি সিম নিয়ে আসবে। কাটায় কাটায় ৩০ মিনিট পরেই ফিরে এল, শিশুসুলভ হাসি দিয়ে বলল তার সিম ঠিক হয়ে গেছে, আর সমস্যা নেই এবং তোমার জন্যও সিম নিয়ে এসেছি। ওর ফোন দিয়েই কল করলাম এজেন্সি কর্নধার মাইকেল কে। সে জানালো আজকে জাহাজ আসার সম্ভাবনা নেই, আগামীকাল জেটিতে আসতে পারে, সেক্ষেত্রে আগামীকাল জাহাজে যাব। ওকে জানালাম যে তার ড্রাইভার আমাদের দুজনের ব্যাগেজ ট্যাগ নিয়ে গেছে, ব্যাগেজ সংগ্রহ করতে হবে। মাইকেল বলল সে ব্যাপারটা জানে এবং বিকেলে একজন এয়ারপোর্টে যাবে, সে খবর নেবে।

লাঞ্চের অর্ডার দেবার জন্য ফোন করে জানতে চাইলাম আজকে কি আছে। যে ফোন রিসিভ করল, সে সগৌরবে জানাল যে লাঞ্চে ফিশ আছে অথবা ফ্রাইড ফিশ আছে। ফিশ আর ফ্রাইড ফিশের কি পার্থক্য তা জানার চেষ্টা না করেই ফিশের কথা বলে দিলাম সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। দুপুরেও একই স্টাইল, সাড়ে বারটার দিকে দরজা ঠক ঠক করে জানিয়ে দিয়ে গেল যে আধার দেয়া হয়েছে। বেশ বড়সর স্যামন মাছের দুই টুকরা, খেতেও বেশ ভালো। এদিকে আমার একজোড়া জুতাও নেই, নেই একটা রেজর, কোথাও একটু ভদ্রস্থ ভাবে যাব সে উপায়ও নেই। ইগরকে বললাম চল ওয়ালমার্টে যাই, কিছু কেনা কাটা করব। ইগর মহানন্দে রওনা হলেও সৌরভ যাবার কোন আগ্রহ প্রকাশ করল না, সে ঘুমাবে।

উবার ডেকে দুজনে চলে গেলাম ওয়ালমার্টে। রেজর সহ টুকটাক জরুরী কয়েকটি জিনিষ কিনে নিলাম। ইচ্ছে ছিল কিছু শুকনো খাবার নেব, ইগর নিতে দিল না, বলল বাড়ি থেকে বউ অনেক খাবার দিয়ে দিয়েছে, যা আমরা চারজনে শেষ করতে পারব না। সাড়ে পাঁচটা বাজেই ফিরে এলাম হোটেলে, রুমে ঢোকার সময় দেখি মেঝেতে ডিনার সার্ভ করা হয়ে গেছে। হাত দিয়ে দেখলাম খাবার একদম গরম। ডিনারের জন্য অর্ডার দিয়েছিলাম বিফ-স্টেক, সুতরাং গরম গরম খেয়ে নিলাম। রাতে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি, হোয়াটসএপে টেক্সটিং করতে করতে কোন এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম নিজের অজান্তে আর শেষ করলাম অপেক্ষার আরেকটি দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে