চলতি মাসের শেষে ফের বন্যার আশঙ্কা

0
161
পদ্মায় প্রবল স্রোতে পদ্মা সেতুর ওয়ার্কশপের একাংশ বিলীন হয়েছে। সেখানে তিনটি বালুবাহী ট্রাক ডুবে গেছে। এর মধ্যে একটি ট্রাক উদ্ধারের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা

দেশের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও চলতি মাসের শেষভাগে আবারও স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এই আগস্টের শেষার্ধে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া চলতি মাসে দেশের প্রায় সর্বত্রই স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এদিকে বর্তমানে দেশে ধীরগতিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এখনো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নওগাঁ—এই ১৭ জেলার ২৭টি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে উজানের অববাহিকার অনেক স্থানেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র তা মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। ইতিপূর্বে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল,আগস্ট মাসে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

এদিকে বর্তমানে দেশে ধীরগতিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। মানুষজন নিজের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ পানিতে ভেসে যাওয়া ঘরের চাল, বেড়া, মেঝে ঠিক করতে শুরু করেছেন। এদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত কমা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল আরো ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ভেতরে ও বাইরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। দেশের ভেতরে সাতক্ষীরায় ৭৫, যশোরে ৭৩ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ৬৪ ও চট্টগ্রামে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় সারা দেশেই কম-বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে এবার অন্তত ৩১ জেলায় বানের পানিতে ঈদের আনন্দ ভেসে গেছে কৃষকের। করোনা মহামারির মধ্যে একের পর এক দুর্যোগে নিঃস্ব হয়েছেন দেশের অনেক কৃষক। কৃষকের আউশ ধান, আমনের বীজতলা এবং সবজি খেত বানের পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়েও অনেকে বিপদে আছেন। এর আগে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২০০৪ সালের পর দেশে এত দীর্ঘসময় ধরে আর কখনো বন্যা ছিল না। সবশেষ দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ ও ১৯৮৮ সালে। এরপর এত দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ছিল না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে