ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চরম অনিশ্চয়তায় আছে : কৃষিমন্ত্রী

    0
    194
    বন্যায় আউশ-আমনের ব্যাপক ক্ষতি।

    চলতি মৌসুমের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ-আমনের আবাদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বন্যায় ৩৮টি জেলার ১ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমির ১৪টি ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ও আমন ধানের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি।

    সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মাঠে থাকা আউশ ধানের অনেক জমি বন্যায় ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে আমনের বীজতলা। কারণ, আমনের চারা ও আউশ তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি পানির নিচে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, আমন মৌসুমের জন্য ২ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। অন্যদিকে ১৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে গেছে। ফলে বন্যায় এ দুটি ফসলের উত্পাদন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

    কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কৃষক এবার সবজি আবাদে মার খেয়েছেন। মৌসুমি ফল চাষেও ভালো দাম পাননি। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির রেশ কৃষক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে বন্যার ধাক্কা কৃষকের জন্য সামলে ওঠা কঠিন হবে।

    ডিএই সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের বন্যায়। এই ধাপে বোনা আমন ধানের ৫৬ হাজার ৩৬২ হেক্টর ও রোপা আমন ধানের ৮ হাজার ৭৫৪ হেক্টর জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৫ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৯৩৮ হেক্টর জমির আউশ ও আমনের ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ৯ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে করা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে।

    দ্বিতীয় ধাপের এ বন্যায় আউশ ও আমন ছাড়াও ২৬ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমির পাট, ১১ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি, ১ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমির ভুট্টা, ১ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির তিল, ১ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির আখসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    এর আগে প্রথম পর্যায়ে ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল জেলায় ১১টি ফসলের প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকা। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার জন। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৩৮টি জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা না হলেও ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।

    ডিএই জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে আমনের চারা বিতরণ করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কোনো এলাকায় যদি আমন চাষ সম্ভব না হয়, তাহলে ৫০ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার মাসকলাই বীজ ও সার দেওয়া হবে। এছাড়া যে এলাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে, সেখানে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী নাবিতে বপনযোগ্য বীজ সরবরাহ করা হবে।

    এদিকে বন্যায় কৃষকের ক্ষতি পোষাতে গত মঙ্গলবার কৃষি কর্মকর্তাদের দ্রুত বন্যা প্লাবিত এলাকায় সরেজমিনে মাঠ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। বন্যার পানি নেমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে কৃষি পুনর্বাসন ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজ করা হবে।

    একটি উত্তর ত্যাগ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে