আজ তথ্যমন্ত্রীর ড. হাছান মাহমুদের ৫৭তম জন্মদিন

    0
    290
    মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সুমন শামস, সভাপতি, নোঙর বাংলাদেশ ছবি : সরকার সজীব

    আজ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ৫৭তম জন্মদিন। ১৯৬৩ সালের এই দিনে (৫ জুন) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

    তাঁর বাবা এডভোকেট নুরুচ্ছাফা তালুকদার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন রাঙ্গুনিয়া থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাসমূহের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)।

    শিক্ষা জীবনে ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম সরকারী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স এবং ১৯৮৯ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।

    ১৯৯২-৯৩ সালে বেলজিয়ামের বিখ্যাত ব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিষয়ক ডিপ্লোমা এবং ১৯৯৫-৯৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের উপর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ২০০০-২০০১ সালে বেলজিয়ামের বিখ্যাত লিম্বুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পরিবেশ বিষয়ক পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

    শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি তিনি সরকারী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭৫ সালে জুনিয়র বিতর্ক টিমের দলনেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন। জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের দলনেতা হিসাবে নেতৃত্ব দেন তিনি।

    ব্রাসেলস ব্রীজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে তিনি বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের এক হাজারেরও বেশি বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এই এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

    রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ড. হাছান মাহামুদ ১৯৭৮ সালে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। সে সময় তিনি চট্টগ্রাম শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯-৮১ সালে হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

    ১৯৮৯-৯০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
    ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

    ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। ১৯৯৫ সালে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

    এসময় বাংলাদেশের আলোচিত আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তিনি নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের বিভিন্ন দমন পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বহির্বিশ্বে তিনি কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। পরে পিএইচডি অর্জন শেষে দেশে ফিরলে ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান।

    তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস এম কিবরিয়ার সাথে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মনিটরিং সেলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতার বিশেষ সহকারী হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। এক এগারোর সময় তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের বিভিন্ন হুমকি ও রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। প্রতিনিয়ত তাড়া করেছে গ্রেফতার ও গুম আতঙ্ক। তবুও এক মুহুূর্তের জন্য তিনি ছেড়ে যাননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। তাঁর পক্ষে মিডিয়ায় সামনে সাবলীল উপস্থিতি ও সাহসী অবস্থানের জন্য দেশি-বিদেশি মিডিয়ার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন তিনি।

    ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন বাঁচানোর তোয়াক্কা না করে প্রিয় নেত্রীকে বাঁচানোর জন্য মাবনঢাল তৈরি করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। শরীরে এখনো গ্রেনেডের ৪০টিরও বেশি স্প্রিন্টার তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন।

    ২০০৮ সালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যু হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চট্টগ্রাম-৭ আসনের এমপি নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

    পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পরই তাঁকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

    এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে গঠিত সর্বদলীয় মন্ত্রিপরিষদে তিনি মন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। মন্ত্রী হিসেবে মহাজোট সরকারে পাঁচ বছর পূর্ণ করার পর দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

    এরপর তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর হিসেবে এখনো দায়িত্বে আছেন।

    ২০১৬ সালে ‘গ্রীনস্টার’ পুরস্কার লাভ করেন। যে পুরস্কারকে পরিবেশ বিষয়ক নোবেল পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ও দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টানা দুই মেয়াদে।

    ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো রাঙ্গুনিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শপথ গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। এই দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর একের পর এক চমকপ্রদ কার্যক্রমে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ড. হাছান মাহমুদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

    একটি উত্তর ত্যাগ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে