অপরিকল্পিত শিল্পনগরীর বর্জ্যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কৃষি ও পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলছে!

0
875
বুধল ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার জনাব হেলাল মিয়া দেখাচ্ছেন সমান্য বৃষ্টি হলে এই বর্জ্যের পানি হাড়িয়া যাওয়ার রাস্তাটি তলিয়ে তাহার বাড়ী হয়ে তার পুকুরে গিয়ে এই বর্জ্য পরে। তারা বড় অসহায়। এই অবস্থার পরিত্রান চায় তারা। ছবি: কামারুজ্জামান খান

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিয়ন “বুধল ইউনিয়ন”। এ ইউনিয়নে ৩টি গ্যাস কূপ ও জেলার একমাত্র শিল্প নগরী “বিসিক” অবস্থিত। সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে কুমিল্লা-সিলেট হাইওয়ে এবং ঢাকা-আগরতলা রোড ও আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর টু আগরতলার ত্রিপুরা রোড এর পাশে অবস্থিত জেলার একমাত্র শিল্পনগরীটি অবস্থিত। এ শিল্প নগরীতে সিলিকেট, সাবান, প্লাষ্টিক, ঔষধ এবং খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন হয়ে থাকে।

সমান্য বৃষ্টি হলে এই বর্জ্যের পানি হাড়িয়া যাওয়ার রাস্তাটি তলিয়ে তাহার বাড়ী হয়ে তার পুকুরে গিয়ে এই বর্জ্য পরে। ছবি: কামারুজ্জামান খান

কামরুজ্জামান খাঁন, নোঙর প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া: বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিসিক শিল্প নগরীর মধ্যে এটি অন্যতম। সরকারের রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে ও এ শিল্প নগরীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এ শিল্প নগরীটির অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে অত্র এলাকাসহ বিসিক ও মেইন রোড সংলগ্ন খালটি আজ এই এলাকার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে।

এ শিল্পনগরীর শিল্প বর্জ্য ড্রেন হয়ে সব বর্জ্য এই খালটিতে এসে নামছে এতে করে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও আশেপাশের কৃষিজমি গুলো ও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। অল্প বৃষ্টি হলেই খালের বর্জ্য কৃষিজমিতে গিয়ে পড়ায় কৃষি কাজের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এবং এর ফলে এখানে কর্মরত শ্রমিকসহ আশেপাশের এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে শোকে ভুগান্তিতে দিনাতিপাত করছে।

শুষ্ক মৌসুমে এই বর্জ্য শুকিয়ে ধুলায় মিশিয়ে বাতাসের সাথে মিশে বিসিক, হাইওয়ে রোডসহ পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠে, এবং মানুষের নাক, মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যগত দিকে দিয়ে প্রচুর ক্ষতি সাধন করছে।

বুধল ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার জনাব হেলাল মিয়া দেখাচ্ছেন সমান্য বৃষ্টি হলে এই বর্জ্যের পানি হাড়িয়া যাওয়ার রাস্তাটি তলিয়ে তাহার বাড়ী হয়ে তার পুকুরে গিয়ে এই বর্জ্য পরে। তারা বড় অসহায়। এই অবস্থার পরিত্রান চায় তারা। ছবি: কামারুজ্জামান খান

এই শিল্প নগরীর একমাত্র পুকুরটিও (জলাশয়)শিল্পবর্জ্য দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। বর্জ্যের আক্রমনে পুকুটির প্রাণ আজ নিঃশেষ হওয়ার উপক্রম। অত্র এলাকার সাবেক মেম্বার (৭নং ওয়ার্ড) জনাব হেলাল মিয়া বলেন, বিসিক এর এই বর্জ্যের ব্যাপারে এলাকাবাসী সহ কত মানববন্ধন, দৌড়ঝাপ করেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসি, তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ীর পাশ দিয়ে হাড়িয়া যাওয়ার রাস্তাটিতে একটু সামান্য বৃষ্টি হলে এই বর্জ্য খাল ভরে রাস্তা তলিয়ে আমার বাড়ীর ওঠানের উপর দিয়ে আমার পুকুরে গিয়ে পড়ে।

আমার পুকুরটিতে আমি মাছ চাষ করতে পারিনা। আর ওই দিক দিয়ে এই বর্জ্য খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত পাওয়া যাবে এই বর্জ্য। আর পুকুরের( জলাশয়) কথা কি বলব !! একসময় এ পুকুরটিতে শ্রমিক ও এলাকাবাসী নারীপুরুষ সকলেই গোসল করত। তখন এই পুকুরে মাছ চাষও করা হত। আজ গোসল করা তো দূরের কথা, পানিতে ছুঁয়ে দেখলেও ভয় লাগে হাতে পচন ধরে কি-না !!

বিসিকের একমাত্র জলাশয়টি আজ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। এবং দখলের পায়তারা চলছে। ছবি: কামারুজ্জামান খান

পুকুরটি যারা ইজারা নিয়ে চাষ করত, তারা মুন্নি সোপ ফ্যাক্টরীর নামে ক্ষতিপূরণ মামলা পর্যন্ত করেছিল। পর্যাবেক্ষনে দেখা যায়, মুন্নি সোপ ফ্যাক্টরীর পিছনের অংশ দিয়ে আস্তে আস্তে ভরাট করে দখলের চেষ্টায়ও লিপ্ত তারা। একই অভিযোগ এখানে কর্মরত সকল শ্রমিদেরও।

বিসিকের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব হাজী জামাল মিয়া বলেন, গত বছর ৪/৫ লক্ষ টাকা খরচ করে খাল পরিষ্কার করার কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছিল। এখন হাইওয়ে রাস্তার কাজ শুরু হবে, রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার পর অবশিষ্ট খাল কতটুকু থাকে তা দেখে আমাদের একটি স্থায়ী ড্রেন করারও পরিকল্পনা আছে।

বর্জ্যের উৎসস্থল থেকে খাল পর্যন্ত গড়ানোর চিত্র। ছবি: কামারুজ্জামান খান

শুধুমাত্র এই সিলিকেট ফ্যাক্টরীগুলোর বর্জ্যের ফলে অত্র জলাশয়টি ও বিসিকের সামনের খালটি ও তৎসংলগ্ন কৃষিজমিসহ ও আশে পাশের এলাকার মানুষজন আজ মারত্নক হুমকির মুখে টেলে দিচ্ছে। এবং এই বর্জ্য খালটি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত পরিবেশ দূষন করছে।

বিসিকের একমাত্র জলাশয়টি আজ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। এবং দখলের পায়তারা চলছে। ছবি: কামারুজ্জামান খান

এ ব্যাপারে তার সংগঠনের সভাপতিসহ এই ৪/৫ টি সিলিকেট ফ্যাক্টরীগুলোকে বার বার তাগাদা দেওয়া সত্বেও তারা তাদের নিজস্ব শোধানাগার ব্যবহার করছে না। কেউ শুনছে না তাদের কথা, এমন কি তার ভাই ইউসুফ সিলিকেট এর মালিক মোঃ ইউসুফ ও তার কথা শুনছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। এব্যাপারে তিনি নোঙর সহ যেকোন সংস্থা, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে তার সংগঠন পাশে থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

বর্জ্যের উৎসস্থল থেকে খাল পর্যন্ত গড়ানোর চিত্র। ছবি: কামারুজ্জামান খান

এব্যাপারে বিসিক’র অফিস বন্ধ থাকায় ব্যবস্থাপকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল হক এর সাথে বার বার যোগাযোগ করার পরও এ ব্যাপারে তিনি কোনে বক্তব্য পেশ করেনি।

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া বুধল ইউনিয়নে গড়ে তোলা অপরিকল্পিত শিল্পনগরী: ছবি: কামারুজ্জামান খান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে