ঘরে ফিরতে পারবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা

0
272

তাঁদের আর হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঘরে ফেরার চেষ্টা করতে গিয়ে রাস্তার পাশে অনাহারে মরতে হবে না। গুজব শুনে স্টেশনে গিয়ে ভিড় জমিয়ে পুলিশের লাঠিও খেতে হবে না।

লকডাউনের ৩৮ দিনের মাথায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিলো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা ছাত্র ও পর্যটকরাও নিজেদের রাজ্যে ফিরতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে আগামী ৪ মে থেকে দেশের যে সব জেলায় করোনার প্রকোপ নেই, সেখানে লকডাউনের কড়াকড়ি আরও কমানো হবে। নতুন করে নীতি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন কোন জায়গায় ছাড় দেওয়া হবে। লকডাউন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই বোঝা যাচ্ছে, দেশের সবুজ জেলাগুলি, যেখানে গত ২৮ দিনে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি, সেখানে লকডাউনের কড়াকড়ি কার্যত থাকবে না।

এর মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণার ফলে বিভিন্ন রাজ্যে লাখ লাখ শ্রমিক আটকে পড়েছেন। এই গরিব মানুষগুলি কার্যত রাজ্য সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া খাবার ও আশ্রয়ের ওপর ভরসা করে বেঁচে আছেন। সকলেই যে এই সুযোগ পাচ্ছেন, এমন নয়। কাজ নেই বলে তাঁদের হাতে টাকাও নেই। এই শ্রমিকেরাও ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া। অনেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করছিল না সরকার। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। যাঁদের করোনার কোনও লক্ষণ নেই, তাঁদের বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে। তাঁরা বাসে করে বাড়ি ফিরবেন। বাসগুলিকে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে দেওয়া হবে। তবে প্রতিটি সফরের আগে বাসগুলি জীবাণুশূন্য করতে হবে। প্রতিটি রাজ্যকে এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কদের চাপও কাজ করেছে। সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে অডিও, ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা। সূত্র জানাচ্ছে, তাঁরা বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের অবিলম্বে ফেরার ব্যবস্থা করা হোক। না হলে লোকের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এর ফলে রাজনৈতিকভাবে বিজেপির ক্ষতি হতে পারে। তা ছাড়া উত্তর প্রদেশ সরকার সম্প্রতি হরিয়ানা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তাতে বেজায় চটেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তিনি বলেছিলেন, এমন ভাবে একটি রাজ্যকে কেন এই বিশেষ অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকেই সব চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যান। উত্তর প্রদেশ শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনলে নীতীশ কুমার প্রবল চাপে পড়ে যাবেন, এটা সহজবোধ্য। তার ওপর সুপ্রিম কোর্টেও এ নিয়ে মামলা করা হয়েছে। কেন্দ্রকে তারা নোটিস দিয়েছে। তাই বিড়ম্বনা এড়াতে এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হলো।

আগামী ৪ মে থেকে বিভিন্ন রাজ্যে সবুজ তালিকায় থাকা জেলাগুলি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সবুজ তালিকায় থাকা আটটি জেলায় নিয়ম মেনে সব ধরনের কারখানা খোলা যাবে। ছোট দোকান, হার্ডওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স, বই, খাতাপত্র ইত্যাদির দোকান খোলা যাবে। চিকিৎসকরা তাঁদের চেম্বার চালু করতে পারবেন। ওই আট জেলায় বাসও চলবে, তবে তাতে ২০ জনের বেশি যাত্রী থাকতে পারবেন না। সবুজ ও কমলা তালিকায় থাকা জেলায় ট্যাক্সি চলবে, তবে সেখানে তিনজনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। তার মানে লাল তালিকায় থাকা কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া বাকি জেলাগুলোয় ট্যাক্সি চলাচলে কোনও বাধা থাকবে না। লোকেরা যাতায়াত অন্তত করতে পারবেন। কাজ-কারবারও শুরু হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা কিছুদিন ধরেই বলছেন, এ বার কল কারখানা চালু না হলে লোকে না খেতে পেয়ে মারা যাবেন। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ১২ কোটি লোক এপ্রিল মাসের বেতন পাবেন না। সরকারও মনে করছে, করোনা আটকাতে গিয়ে এই ভাবে লকডাউন করার ফলে লাভ হয়েছে। করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই ভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য তো সবকিছু থামিয়ে রাখা যায় না। এ বার লকডাউন কিছুটা শিথিল করার সময় এসেছে।

এ দিকে ভারতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। করোনায় মোট মারা গিয়েছেন এক হাজার ৭৪ জন। আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৫০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৭১৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। (পিটিআই, এএনআই)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে