করোনা কি জিতিয়ে দেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনকে

0
292

দক্ষ হাতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রুখে দিতে সক্ষম হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন হয়তো পেতে যাচ্ছেন তার পুরস্কার৷ সর্বশেষ জনমত জরিপ বলছে মুনের দলই আবার দেশটির ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে৷

অথচ, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নানা সিদ্ধান্তের কারণে দারুণ সমালোচিত মুনের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল৷ জনগণ তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ জানুয়ারির জনমত জরিপও বলেছিল, তাঁর দল ডেমোক্রাটিক পার্টি আসন্ন নির্বাচনে পরাজিত হতে যাচ্ছে৷

বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ৷ বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে এই প্রথম কোনো দেশ পূর্বনির্ধারিত সময়েই জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে৷

গত বছর ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান নগরীতে নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়৷

দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে মুন সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার পরিমান বাড়ান এবং সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা হ্রাস করেন৷ বড় বড় ব্যবসায়ীরা ‍তার এই উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন৷ বিরোধী রক্ষণশীল দলগুলো তার বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার প্রতি অতিরিক্ত সদয় আচরণ করার অভিযোগও তুলছিল৷ যা দেশের জন্য কোনো লাভ বয়ে আনেনি৷ এমনকি তারা বলেছিল, সরকার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও যথাসময়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়নি৷ মাত্র তিন মাসে তাদের ওইসব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে৷

করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করে পূর্বনির্ধারিত সময়েই দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং তাদের তিনশ আসনের পার্লামেন্টে মুনের দল ডেমোক্রাটিক পার্টি ও মিত্ররাই যে সংখ্যাগোরিষ্ঠ হবে সে পূর্বাভাসও পাওয়া যাচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধের লড়াইয়ে বিশ্বের কাছে এখন রোল মডেল দক্ষিণ কোরিয়া৷

দক্ষিণ কোরিয়া কীভাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এতটা সফল তা জানতে বিদেশি দেশগুলোর সরকার নিয়মিত সিউলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে৷

মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী ১০ হাজার ৫৬৪৷ এদিন নতুন আক্রান্ত হন মাত্র ২৭ জন৷ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি একদিনে সর্বোচ্চ নতুন আক্রান্ত ছিল ৯০৯ জন৷ মোট মৃত্যু ২২২৷

সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবীদ পার্ক সাইং-ইন বলেন, ‘‘সরকার সত্যিই পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে৷ এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সরকার সিউলের প্রশংসা করছে৷ ফলে দেশেও সরকারের প্রতি জনগণের মনভাবের পরিবর্তন এসেছে৷’’ 

রাজনৈতিক আস্থা বৃদ্ধি

ভোটের আগে সর্বশেষ জনমত জরিপে মুনের দলের বেশ উন্নতি হয়েছে৷ জরিপে অংশ নেওয়া ৪১ শাতাংশ মানুষ ডেমোক্রাটিক পার্টির পক্ষে মত দিয়েছেন৷ অন্যদিকে, লিবার্টি কোরিয়ার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়ে ২৩ শতাংশে ঠেকেছে৷ ব্যক্তিগতভাবে মুন নিজে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন৷ যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ৷

এ বিষয়ে অধ্যাপক পার্ক বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে যখন প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয় তখন আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস সংকট বেশ গুরুতর রূপ নিয়েছিল৷ তারপরও বিরোধী দল নির্বাচন স্থগিত করতে রাজি হয়নি৷ কারণ, তারা হয়তো ভেবেছিল এই সংকট তাদের পক্ষে যাবে৷

কিন্তু সেটা হয়নি৷ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিউল ‘টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট’ কৌশল গ্রহণ করে৷ জনগণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলে এবং ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পটগুলোতে বিপুল সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মী পাঠায়৷ ‍সরকার হটস্পটগুলোতে আর্মি মোতায়েন করে কঠোর হাতে কোয়ারান্টিন নিশ্চিত করে৷”

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কোরিয়া সরকার তাদের কৌশলের ফল পেতে শুরু করে৷ আগে ভাগে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ না করায় যারা মুন সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে সমালোচনা করেছিল তাদের মুখও বন্ধ হয়ে যায়৷ 

মহামারির মধ্যে ভোট

তবে সব কিছুর পরও ভোটের দিন বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেবে৷ ভোটারদের ফেস মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্ল‍াভস পরে ভোট কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া প্রত্যেক ভোটারের শরীরের তাপমাত্রা মেপে তারপর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে৷ শরীরে জ্বর থাকলে তাদের জন্য আলাদা বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কিন্তু অনেক প্রার্থী অসুস্থ থাকায় ভোটের প্রচার চালাতে পারেননি৷

এবারের ভোটে সব দল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ মূলত তাদের প্রচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এটি৷ ডযেচে ভেলে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে