প্রশাসন ব্যস্ত করোনা প্রতিরোধে, আ. লীগ নেতা ব্যস্ত সরকারি খাল দখলে!

0
552
রৌমারীতে সরকারি খালের প্রায় ২০ শতাংশ ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ছবি: স্টার

প্রশাসন এখন ব্যস্ত করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ে। আর এটিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল সরকার। তিনি যাদুর চর ইউনিয়নের কর্তিমারী হাট এলাকার সরকারি খালের প্রায় ২০ শতাংশ মাটি ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন। সুরুজ্জামাল সরকার রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন বিষয়টি জানার পরেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া আওয়ামী লীগের ওই নেতা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রাও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না।

স্থানীয়রা জানান, এই সরকারি খালটি কর্তিমারী হাটের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ। বর্ষাকালে বাজারের সব পানি ওই খালে গিয়ে পড়ে। খালটি ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হলে এখানকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা জটিলতায় পড়বে। ফলে, বাজারে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। ওই নেতা কোনো প্রকার বৈধ কাগজ ছাড়াই ক্ষমতার দাপটে মাটি ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা তৈরি করতে শুরু করেছেন।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি যখন এমপি ছিলাম তখনও খালটি দখলের চেষ্টা করেছিল সুরুজ্জামাল। কিন্তু, আমি তা হতে দেইনি। এখন করোনা সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে সরকারি খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন তিনি। আমি বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু, তাতেও কোনো ফল আসছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিষয়টি ঢাকায় জানাব। কারণ, পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই খালটি দখলমুক্ত না রাখা গেলে এ অঞ্চলে বড় ধরনের জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এমনকি বন্যার সময় বন্যা পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহও হতে পারে।’

অভিযুক্ত সুরুজ্জামাল সরকার জানান, তিনি ওই খালের মালিক। সরকারের সঙ্গে মামলা করে কয়েক বছর আগে তার পক্ষে রায় আসে। পৈতৃক সূত্রে তিনি ওই মামলা করেন বলেও জানান।

সুরুজ্জামাল সরকার বলেন, ‘আমার খাল আমি মাটি দিয়ে ভরাট করে দোকানপাট তৈরি করছি। তাতে কেউ কেউ আমার বিপক্ষে কথা বলছেন। আমার কাছে সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।’

কর্তিমারী বাজারের ব্যবসায়ী ও যাদুর চর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সরকারি খালটির পাশে স্থানীয় ৫৪ ব্যবসায়ী সরকারের কাছ থেকে ডিসিআর রশিদ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এটি একটি সরকারি খাল এবং বাজারের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ।’

উপজেলা আ. লীগের উপদেষ্টা ও স্থানীয় কর্তিমারী এলাকার বাসিন্দা সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘খালটি সরকারি এবং এটি বাজারের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের এ বিষয়ে কিছু করার নেই। সরকারি কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’

যাদুর চর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘কর্তিমারী বাজারটি সরকারি এবং বাজারের সঙ্গে যুক্ত খালটিও সরকারি। এটি কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। যদি কেউ এটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেন তাহলে তা অবৈধ। আমি খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।’

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল ইমরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাউকে প্রভাব খাটিয়ে সরকারী সম্পদ দখল করতে দেওয়া হবে না। বিশেষ করে পানি নিষ্কাশনের খাল অবৈধভাবে মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ মেনে নেওয়া হবে না। আমরা মাঠ ভিজিট করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

কর্তিমারী হাটের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ সরকারি খালটি অবৈধ দখলদারের কবল থেকে মুক্ত করতে সরকারি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সুত্র : স্টার