করোনা যুদ্ধের ৩১ কৌশল : সুমন শামস

0
645
সুমন শামস, সম্পাদক, নোঙর নিউজ

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমণে আরো দুইজন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন শিশুও রয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট আটজন।

বৈশ্বিক মহামারি রূপ পাওয়া কভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশ লকডাউন ঘোষণার পর বাংলাদেশও এক থেকে অন্যের মধ্যে সংক্রমণ এড়াতে গত ২৬শে মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই ছুটি বাড়ানো হয়েছে। জীবনযাত্রা বলতে গেলে থেমে আছে, কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। অনেকের ঘরে পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। আবার অনেকেই খাদ্য মজুদ করে রেখেছে।

ঠিক এ অবস্থায় ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি আতঙ্কিত না হয়ে এই সংকটকালে সবাইকে সংবেদনশীল ও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর চার দফা পরামর্শ এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। নতুন ৩১ দফা নির্দেশনায় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ এবং সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া এবং কেউ যেন সহায়তার বাইরে না থাকে সে ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ খাদ্য উত্পাদনসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর জোর দেন তিনি। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকলেও খাদ্য উত্পাদন অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন। নতুন ৩১ দফা নির্দেশনায় সবাইকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করতে ও করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সবার জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও বলা হয়েছে এই নির্দেশনায়। আবার যাঁরা যাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাঁদের প্রতি মানবিক আচরণ করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সবার প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব।’

এই রকম পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি যে, দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করে সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হয়েছে। এবং এই দূরত্ব মেনে চলার জন্য দেশে প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তার পরেও কেনো এই অজানা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে দেশেস প্রয় এসকল জেলায়?

উত্তর আসেনা কেন? একদিকে পুলিশের লাঠি চার্য, এসি ল্যান্ড সিনিয়র সিটিজেনদের কানে ধরানো শাস্তি, দরিদ্রদের জন্য ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচী এবং সেনাবাহিনীর টহল চলছে।

একই সময় দেখছি লকডাউনের প্রথম দিকেই বিজিএমইএ দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০০০ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছেন। যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানুষদের বাড়ী ভাড়ার জন্য কোন টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় নি।

এর মধ্যেই আবার পোশাক কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত কে দিলো? কেন দিলো? এ কারণে গত দুই দিন থেকে ঢাকার বাইরে কোয়ারেন্টাইনে ছুটিতে চলে যাওয়া হাজার জাহার শ্রমিক সামাজিক দূরত্বের কথা না ভেবেই পায়ে হেটে আবার ঢাকা চলে আসছেন! তাতে ঢাকা শহর আরো করোনা সংক্রামনের ঝুকিতে পড়ছে।

ঐদিকে ভারতের নিজামুদ্দিন তাবলিগের বেশীর ভাগ নাগরিক ইন্দোনেশিয়ান এবং বাংলাদেশী। ইতিমধ্যেই ভারতে ছড়িয়ে পড়া করোনার জন্য এই তাবলীগ জামাতকে দায়ি করছে ভারত সরকার। এ অবস্থায় ভারত থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশী দেশে প্রবেশ করে এখন সকল জেলায় তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।সরকার বলেছিলেন যে, যে কোন অবস্থা আমরা আমাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনবো!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মহামারিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এই রোগের কারণে দেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে, নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় কী পরিবর্তন আসতে পারে, এসব বিষয়েও তাঁর দৃষ্টি রয়েছে। নির্দেশনায় তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে। দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এ জাতীয় সংকটকালে বাজারে প্রভাব পড়ে।


প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। যাতে বাজার চালু থাকে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটিও সময়োপযোগী।

প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে সেনাবাহিনী কোন দিকে যাবে? ধিরে ধিরে সমগ্র দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের বিভিন্ন ধরণের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করার কারণে। প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগী হওয়া। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা মেনে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে