ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে চার থেকে ছয় গুণ৷

0
263

সারাবিশ্বে করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে৷ বাংলাদেশে তার উপর বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ৷ এ বছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে চার থেকে ছয় গুণ৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ২৬৩জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন৷ যেখানে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিলো ৭৩জন৷ সেই হিসেবে গত বছরের চেয়ে প্রায় ২৬০ ভাগ বা প্রায় চার গুণ বেড়েছে রোগীর সংখ্যা৷

ডেঙ্গু এবং এডিস মশা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার৷ ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের সাথে তার তথ্যের কিছু ভিন্নতা আছে৷ তিনি জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন৷ আর এবার মার্চের ১৭ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৬৩ জন৷ এই হিসেব বিবেচনায় নিলে গত বছরের তুলনায় এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছয় গুণ বেশি৷

তিনি জানান, ‘‘গত বছরে প্রথম তিন মাসে ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব ছিল গড়ে পাঁচ৷ আর একই সময়ে এই বছরে হলো ১০৷ ২০ এর বেশি ঘনত্ব হলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ৷ এরকম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাও আমরা পেয়েছি৷” এডিস মশার ঘনত্বকে বলা হয় ‘ব্রুটো ইনডেক্স’৷

কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘এখনো বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি৷ আমরা আশঙ্কা করছি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এবার বর্ষার মৌসুমে জুন-জুলাই মাসে গতবারের চেয়ে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেশি হবে৷ পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷’’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এখন দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে৷ তবে তারা এখনই সার্বিক চিত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে৷ এই দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, ‘‘এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি বলেই আমরা বলতে পারি না যে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হবে৷ কারণ গত বছর কোনো কারণে আন্ডার রিপোর্টিংও হতে পারে৷ আমরা একটা সার্ভে করেছি৷ কিন্তু সেগুলো এখনো প্রতিবেদন আকারে প্রস্তুত হয়নি৷ সেগুলো প্রস্তুত হলে সার্বিক চিত্র পাওয়া যাবে৷ তার আগে নয়৷’’

তবে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন৷ বরং তিনি দাবি করেছেন, বাসা বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব কমেছে৷ তবে বেড়েছে বিভিন্ন নির্মাণ কাজ এলাকায়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি এরইমধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি তারা যাতে রিহ্যাবের সাথে কথা বলে৷ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি৷’’

কবিরুল বাসার বলেন, ‘‘মার্চ, এপ্রিল এবং মে এই তিন মাস এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করার ওপর জোর দেয়া দরকার৷ এরপর থেকে বিভিন্ন রাসায়নিকের মাধ্যমে এডিস মশা ধ্বংস করতে হবে৷ এজন্য সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে সক্রিয় হতে হবে৷’’
রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা মুজিববর্ষ উপলক্ষে এপ্রিল মাসকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মাস ঘোষণা করেছে৷ শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, ‘‘আমরা ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করব৷ চিকিৎসা প্রস্তুতি আছে৷ আছে প্রয়োজনীয় কীট৷ তবে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে৷’’

কিন্তু ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্বটি সিটি কর্পোরেশনের৷ অথচ তাদের তেমন কোনো উদ্যোগই নেই৷ দুই নতুন মেয়র এখনো বসে আছেন দায়িত্ব পাওয়ার অপেক্ষায়৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন৷ মারা গেছেন ২৬৬ জন৷ গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়৷ এবার এখনই ব্যবস্থা না নিলে গত বছরের চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে৷ ডয়েচে ভেলে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে