বিমান যাত্রায় করোনা ভাইরাস মুক্ত থাকবেন যেভাবে

0
277

বিমানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাস্ক-গ্লাভস থেকেও কার্যকর পদ্ধতির কথা জানালেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল বিশেষজ্ঞ ডেভিড পল। তিনি বলেন, ‘মাস্ক-গ্লাভসের কথা ভুলে যান, বরং বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাস্ক ও গ্লাভস অসুস্থদের ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া বন্ধে সবচাইতে কার্যকর। কিন্তু বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যারা সুস্থ রয়েছেন, তাদের জন্য খুব একটা কার্যকর নয়। কেননা এই ভাইরাস দীর্ঘ সময় বাহক ছাড়া বেঁচে থাকতে পারেনা।’ ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এমনটিই জানিয়েছেন ডেভিড পল।

চীনের প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বিশ্বের প্রায় ২৫ টি দেশে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসের কারণে চীনের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। চীনে যাওয়ার কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশি পাইলটদেরকে অনেক দেশেই প্রবেশ দেওয়া হচ্ছেনা। করোনার ভয়ে বিভিন্ন দেশ যখন চীন থেকে নিজেদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গুটিয়ে নিচ্ছে। ঠিক তেমন সময়ই ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ ডেভিড পল সতর্ক করলেন কিভাবে বিমানে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

ব্লুমবার্গকে দেওয়া ডেভিড পলের সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো:

বিমানেও কি করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে?

বিমানে এর সম্ভাবনা কম। তবে আধুনিক বিমানগুলোতে বাতাস প্রবেশের ব্যাপারটি মুভি থিয়েটার কিংবা অফিস থেকে আলাদা। বাতাস আসলে বিশুদ্ধ এবং পুনঃপ্রবাহিত বায়ুর মিশ্রণ, প্রায় অর্ধেক অর্ধেক। পুনঃপ্রবাহিত বায়ু এমনভাবে সংশোধিত হয়, যেমনটি হয় একটি অপারেশন থিয়েটারে। বিমানে যে বায়ুর চলাচল হয় সেটিতে ৯৯.৯৭ শতাংশ ভাইরাস থাকেনা। সুতরাং সেখানে বায়ু থেকে কিছু আসে না। যা আসে মানুষ থেকে।

বিমানের সিট কিংবা অন্য কোন কিছু থেকে কি করোনা সংক্রমণ হতে পারে ?

ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু আমাদের মত জীবন্ত কিছুর ভেতরই বেঁচে থাকে। কোন শুষ্ক বস্তুর চেয়ে কারো সঙ্গে শুধুমাত্র হ্যান্ডশেক করলে ভাইরাস ছড়ানোর অনেক ঝুঁকি থাকে। সুতরাং এটা মনে করা হয় সাধারণ পরিষ্কার এবং বাড়তি পরিষ্কার সংক্রমণ বন্ধে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষজন কি বিমানে উঠে মেলামেশা বন্ধ করে দেবে? অথবা সিনেমা দেখা, কনসার্টে যাওয়া বন্ধ করবে? আমার মনে হয় না।

বিমানে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে জরুরি কি?

হাত পরিষ্কার রাখা, কারণ এটা মানুষের চিন্তার বিপরীত। হাত থেকেই এই ভাইরাস বেশি ছড়ায়। সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো হাত স্বাস্থ্যকর রাখা এবং বারবার হাত ধোয়া অথবা দুটোই। আপনার হাঁচি অথবা কাশির সময় কিছু দিয়ে মুখ ঢাকাটা খুব জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় যদি টিস্যু ব্যবহার করেন এবং পরে হাত ধুয়ে নেন। হাত ধোয়া এবং তা শুকিয়ে নেওয়া ভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

মাস্ক এবং গ্লাভস কি ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে?

প্রথমত মাস্ক। এর থেকে সুবিধা পাওয়ার প্রমাণ কম, যদি থাকেও সেটি খুব সাধারণ পরিস্থিতিতে। মাস্ক তাদের জন্য উপকারী যারা অসুস্থ এবং তাদের থেকে অন্যদের রক্ষার জন্য এটা ভালো। কিন্তু সবসময় মাস্ক পরে থাকা কোনা কাজে আসবে না। এটা আরো ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করবে। যদি এটি আদ্র হয়ে যায় তাহলে এটি ভাইরাসদের জন্মাতে আরো উৎসাহ দেবে। গ্লাভস তো আরো বাজে। কারণ মানুষ হাতে গ্লাভস পরে হাত দিয়ে করার সবকিছুই করে। সুতরাং এটিও জীবাণু ছড়ানোর আরেকটি কারণ হতে পারে। আর গ্লাভসের ভেতর আপনার হাত ঘেমে যায়। কিছু ধরার পর ওই হাত দিয়েই মানুষ আরো অনেক কিছু ধরে।

সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া কি এটা প্রতিরোধ করা যেতে পারে ?

পৃথিবীতে একটা জিনিসের পরিবর্তন হয়েছে সেটি হলো জীবাণুগুলোর একস্থান থেকে অন্যস্থানে দ্রুত ছড়ানোর বিষয়টি। এটা সত্য যে আকাশপথও সেটির অংশ। কিন্তু এমন ভাইরাস প্রতিরোধে আকাশপথ কাজে আসতে পারে। এটি নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আমরা কয়েক বছর ধরে আলোচনা করছি। যদি দেশগুলো তাদের সীমানা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার মত এটিও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

কবে নাগাদ এমন খারাপ পরিস্থিতি শেষ হতে পারে?

প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ শতাংশ করে রোগী বাড়ছে। যতদিন না এই সংখ্যা কমছে ততক্ষণ আমরা তেমনভাবে কিছুই বলতে পারছি না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে