সহজেই নেপালের ভিসা পাওয়ার পূর্ণ প্রক্রিয়া

0
355

বাংলাদেশের খুব কাছেই নেপালের অবস্থান। হিমালয়ের দেশ নেপালের আয়তন প্রায় বাংলাদেশের সমান। অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের গন্তব্য হিসেবে সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয় নেপাল। ট্রেকিং, ক্যাম্পিং, রাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং, বাঞ্জি, রক ক্লাইম্বিং- কী নেই সেখানে। পর্বত দিয়ে ঘেরা নেপালের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসই পর্যটন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক বাংলাদেশ থেকে নেপালে বেড়াতে যায়।

এইতো সেদিন এপ্রিলের শেষে ৯ দিনের বন্ধে নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুর সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকা থামেলে হোটেল খুঁজে না পেয়ে অন্য দেশের পর্যটকরা বুঝতেই পারছিল না সমস্যাটা কোথায়। পরে হোটেল মালিকদের কাছ থেকে তারা জানতে পারলো বাংলাদেশি পর্যটকে ভরে গেছে থামেল, তাই এ অফ সিজনেও এই লোকারণ্য। থামেলে হাঁটার সময় মনে হচ্ছিল ঢাকার নিউমার্কেটে হাঁটছি, চারদিকে এত পরিমাণ বাংলাদেশি পর্যটক ছিল। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কাছ দিন দিন বাড়ছে নেপালের গ্রহণযোগ্যতা যার অন্যতম একটা প্রধান কারণ সহজে ভিসা পাওয়া।

দু’ভাবে আপনি নেপালের ভিসা পেতে পারেন:
১. অন এরাইভাল ভিসা
২. দূতাবাস থেকে স্টিকার ভিসা

অন এরাইভাল ভিসা:

নেপালে গেলেই ভিসা পাওয়া যায় বছরে একবার; 

বলার অপেক্ষা রাখে না অন এরাইভাল ভিসাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। যদিও বাংলাদেশের নাগরিকরা ৪১ টি দেশে অন এরাইভাল ভিসার সুবিধা পেয়ে থাকে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন জটিলতার কারণে সে সুবিধাটা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ব্যবহার করতে পারে না। একারণে অনেক সময় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনও ভিসা না থাকলে যেতে দিতে চায় না। তবে নেপালের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সমস্যাই নেই। নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নেমে আপনি সহজেই পেতে পারেন অন এরাইভাল ভিসা। তবে মনে করে এ কয়েকটা জিনিস অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন:

  • রিটার্ন টিকিট
  • এক কপি ছবি
  • পূরণ করা ভিসা আবেদনপত্র (এ কাজটা দেশে থেকেই করে যেতে পারেন। এই লিংক থেকে ফরমটা ডাউনলোড করে সেটা প্রিন্ট করে সঙ্গে রাখলেই হবে।
  • পূরণ করা ইমিগ্রেশন কার্ড।

আগে থেকে ফরম পূরণ করে রাখতে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই, বিমানেই বিলি করা হয় ইমিগ্রেশন কার্ড ও ভিসার আবেদনপত্র। তবে ছবি যাতে অবশ্যই সঙ্গে থাকে। না হলে বিমানবন্দরে ছবি তোলার জন্য গুনতে হবে ৪০০ নেপালি রুপি (প্রায় ৩০০ টাকা)। এছাড়া ত্রিভুবন বিমানবন্দরে কিয়স্কগুলোতে ফরম পূরণ করে প্রিন্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়াতে পারবেন।

মনে রাখবেন, প্রতিবছর নেপালে একবার ভিসা ফ্রিতে পাবেন, এক বছরের মধ্যে পরেরবার গেলে ২৫ ডলার দিয়ে ভিসা নিতে হবে। তাই লাইনে দাঁড়ানোর সময় খেয়াল করে দাঁড়াবেন কোন লাইনে ভিসা ফ্রি দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সেটাতে লাইন বেশি থাকবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য নেপাল ভিসা ফ্রি রেখেছে, আর ভারতীয়দের নেপাল ভ্রমণে ভিসা লাগে না।

হোটেল বুকিংয়ের কাগজপত্র সঙ্গেই রেখেছিলাম আমরা। থামেলে আমরা থেকেছি হোটেল নানাতে। তাদের মেইল করতেই তারা বুকিং পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাদের প্যাডে সবার নাম লিখে কত তারিখে বুকিং দেয়া হয়েছে সেটা পিডিএফ করে আমাদের পাঠিয়েছিল। যদিও মেইলে তারা বলে দিয়েছে এটা তোমাদের কখনোই  দেখতে চাইবে না। হলোও তাই, বুকিং সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র নেপাল ইমিগ্রেশন দেখতে চায়নি। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ভিসা নেই কেন এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছিল, জবাবে আমরা জানিয়েছি আমরা ভিসা অন এরাইভাল সুবিধা নেব। তখন তারা অফিস থেকে দেয়া এনওসি দেখতে চেয়েছিল, সেটা দেখানোর পর আর কোন প্রশ্ন করেনি।

ইমিগ্রেশন আপনার রিটার্ন টিকেট, ভিসা ফরম আর ইমিগ্রেশন কার্ড নিয়ে আপনার পাসপোর্টে লিখে দেবে কয়দিন থাকতে পারবেন। ভিসা পাওয়ার পর আপনি নিচে নেমে যাবেন আপনার ব্যাগেজ নিতে।

দূতাবাস থেকে স্টিকার ভিসা:

নেপালের ভিসা অফিস; 

অন এরাইভাল ভিসা সহজে পাওয়া গেলেও একটা সমস্যা থেকেই যায়। সেটা হচ্ছে ভিসার জন্য লাইন। পিক সিজনে এ লাইন দু-তিন ঘণ্টাও সময় নষ্ট করতে পারে আপনার। এয়ারপোর্টে পরিবার/বন্ধুবান্ধব নিয়ে কষ্ট করার চেয়ে অনেকে ভিসা আগে নিয়ে নিতে চায়। সেটাও কিন্তু কঠিন কিছু নয়। ঢাকায় নেপালের দূতাবাস রয়েছে বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের জাতিসংঘ রোডে। সেখানে গিয়ে ফরম নিয়ে পূরণ করে জমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। সকাল ৯টা থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত বিনামূল্যে দূতাবাসের গেটেই ফরম বিতরণ করা হয়। চাইলে অনলাইনে ফরম ডাউনলোড করেও নিয়ে যেতে পারেন।

যে জিনিসগুলো লাগবে:
১. এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
২. পূরণ করা ভিসার আবেদনপত্র
৩. পাসপোর্টের ফটোকপি
৪. মূল পাসপোর্ট
রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯:৩০ থেকে ১১:৩০ পর্যন্ত ভিসার জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। সাধারণত একদিনেই ভিসা প্রসেস হয়ে যায়, তার মানে একদিন পর বিকাল ৩:০০টা থেকে ৩:৪৫ এর মধ্যে আপনি ভিসা সহ পাসপোর্ট ফেরত আনতে পারেন। যথারীতি প্রতি বছর একবার (১ লা জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর) ভ্রমণের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য কোনো ভিসা ফি নেই। তবে একই বছরে ২য় বার যেতে হলে ভিসা ফি প্রযোজ্য হবে। সেক্ষেত্রে ভিসা ফি নিম্নরূপ:
১৫ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা ২,২০০ টাকা
৩০ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা ৩,৫০০ টাকা
৯০ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা ৯,০০০ টাকা
ভিসা সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে নেপাল এম্বেসীতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে তাদের হেল্পডেস্কে জিজ্ঞাসা করতে হবে। ফোনে তারা কোন ধরনের তথ্য দেয় না।

এবার আপনি বুঝে নিন আপনি কী করবেন, দূতাবাস থেকে স্টিকার ভিসা নেবেন না অন এরাইভাল ভিসার সুবিধা নিবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে