এ মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়ছে বিস্ময়কর হারে!

0
351
গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ ধরা বেড়েছে

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ ধরা বেড়েছে। মেঘনা নদীতে গত এক সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে।

অথচ একটা সাধারণ ধারণ রয়েছে যে, বর্ষা হলো ইলিশের ভরা মৌসুম। এসময়ই ধরা পড়বে ইলিশের বড় অংশটি।

লক্ষ্মীপরের মৎস্য কার্যালয় বলছে, ২০১৯ সালে একই সময়ে সপ্তাহে বড়জোর ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন মাছ ধরা পড়েছিল। অথচ এবার ধরা পড়ছে আট গুন বেশি মাছ। কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৫-২০ বছরে এমন ঘটনা দেখা যায়নি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, “এটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। আমি গত ১৫-২০ বছরেও এমন ঘটনা দেখিনি। মনে হচ্ছে এটা ইলিশের নতুন মৌসুম হতে পারে, কিন্তু আমরা চাই বারো মাসই মৌসুম চলুক।”

পৃথিবীর মোট ইলিশের প্রায় ৬০% উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ। ইলিশ বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় যে ইলিশের বাস স্বাদের জন্য তারা সবচেয়ে বিখ্যাত।

কোথা থেকে আসছে এত ইলিশ?

মৎস্য কর্মকর্তা মি. হোসেন বলেছেন, যে ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে এগুলো মূলতঃ সাগর থেকে নদীর মোহনায় আসা ইলিশ। আগে কেবল ডিম ছাড়ার সময় নদীর মোহনায় আসত ইলিশ।বিশেষজ্ঞরা বলেন নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি“কিন্তু এই সময়টাতে ইলিশ সাধারণত ডিম ছাড়ে না, কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা অনেকটাই আগের জীবনচক্রে ফেরত গেছে। এর মানে হচ্ছে, আগে ইলিশ কমবেশি বারো মাসই ডিম ছাড়ত, কিন্তু সেই জীবনচক্র অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল, যা ইদানীং আবার ফেরত আসছে।”

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিন গুন হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, নদী এবং নদীর মোহনা দুই জায়গাতেই ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তা সত্ত্বেও সাধারণত বাংলাদেশে শীত মৌসুমে ইলিশ প্রায় পাওয়াই যায় না।

মি. হোসেন বলছেন, “কিন্তু গত এক সপ্তাহে এখানে জেলেরা ৪০০ মেট্রিক টনের মত ইলিশ ধরেছে। আর মাছের আকার দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, এটা এখনই শেষ হয়ে যাবে না, আরো অন্তত দেড় থেকে দুই মাস চলবে।” মি. হোসেন বলছিলেন, এই সময়ে এত ইলিশ ধরা পড়ার সাথে অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময়ের একটা সম্পর্ক রয়েছে।

“কারণ অমাবস্যা ও পূর্ণিমা শুরুর আগের দুইদিন এবং পরের তিনদিন এই সময়ে নদীতে ও নদীর মোহনায় পানির প্রবাহ বেশি থাকে, যে কারণে সে সময়ে সাগর থেকে মাছ বেশি আসে এবং মাছের চলাচলও এ সময় বেশি থাকে।”সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও গত কয়েকদিনের কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া বেশি মাছ ধরা পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও গত কয়েকদিনের কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া বেশি মাছ ধরা পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এত ইলিশ ধরা পড়ছে কেন?

সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ইলিশের পরিমাণ অনেক বেড়েছে, সেটা একটা কারণ।

“ইলিশ মাছ রক্ষার জন্য আগে কেবল জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকতো, কিন্তু গত মৌসুমে জাটকা ইলিশের সাথে সাথে মা ইলিশ ধরার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। ফলে এখন ইলিশ তার জীবনচক্র পূর্ণ করতে পারছে। এর ফলে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

ইলিশ রক্ষায় সরকার কয়েক দফা জাটকা ও মা-ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ২০শে মে থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন সাগরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। সেই সঙ্গে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস এবং অক্টোবরে ২২দিন নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল।

“এই সময়ে সাগর থেকে মাছ নদীতে এসে ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যেতে পারে। এই সময়ে একটি ইলিশের জীবনচক্র পূর্ণ হয়, আগে জীবনচক্র পূর্ণ হবার আগেই তারা ধরা পড়ে যেত।”

তবে সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও গত কয়েকদিনের কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া বেশি মাছ ধরা পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্রেতারা খুশী

অসময়ে বহু পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার কারণে বাজারে ইলিশের দাম কমেছে। আর এর ফলে ক্রেতারা খুশী।

লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের একজন কলেজ শিক্ষক সাবিহা ইয়াসমিন বলছিলেন, গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বাজারে আগের চেয়ে অর্ধেক দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

“পাঁচ থেকে ছয়শো গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ এক হালি এগারোশ টাকায় কিনেছি। মাসের শুরুতে আমাদের পরিবারের এক অনুষ্ঠানের জন্য এই ওজনের ইলিশ মাছ জোড়া (দুইটা) কিনেছি এক হাজার টাকায়।” তবে, লক্ষ্মীপুরের বাজারের আঁচ এখনো ঢাকায় এসে পৌঁছায়নি।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষক ফাতেমা শারমীন বলেছেন, “ইলিশের দাম কমার খবর শুনে বাজারে গিয়ে দেখি এখনো ওখানকার মত কমে নাই, অল্প কমেছে। কিন্তু মাছ যদি এ হারে ধরা পড়তে থাকে, তাহলে আমরা আশাবাদী হতে পারবো।”

বাঙালির ইলিশপ্রীতি অতুলনীয়। কেবল খাবার খাবার পাতে নয়, সাহিত্যে এমনকি কূটনীতিতেও ইলিশ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে অনেকবারই।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিধানসভায় অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্তব্য করেছিলেন যে, ভারত তিস্তার পানি না দেয়ায় পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

এমনকি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে ইলিশ মাছ স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে বাঙ্গালীর ইলিশ প্রীতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে