নৌ-শ্রমিক ও জেলেদের মানবেতর জীবনযাপন, নালায় পরিণত হচ্ছে যমুনা নদী

0
344
নালায় পরিণত হচ্ছে যমুনা নদী। ছবি : সংগ্রহ

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী এখন শুকিয়ে মাঝে মাঝে চর পরেছে। আবার কোথাও কোথাও বন্যার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে জেলার যমুনা চর এলাকার হাজারো নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

জেলার কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজারো একর আবাদি জমি। জমির মালিকরা জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। উত্পাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। এতে কৃষকরা হাসলেও ভরা নদীতে যেসব নৌ-শ্রমিক নৌকা চালিয়ে এবং জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পেশায় নিয়োজিত হাজারো শ্রমিকের রোজগার বন্ধ হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ী এবং এনজিও’র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাড়িতে খোরাকি দিয়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন রোজগারের জন্য। শহরে এসে অনেকে রিকশাভ্যান, টেম্পু, সিএনজি, বাস-ট্রাক হেলপার, গার্মেন্টেস শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।

জেলার কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়ার পরিমল, শুভগাছার বিমল ও বিকাশ কুমার, সিরাজগঞ্জ সদরের বেলুটিয়া, পাইকপাড়া ও ঘোনাপাড়া চরের কুদ্দুস, ওয়াহাব, সেতাবআলী জানান, যমুনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় চর পরায় এখন আর জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছি। কাজিপুরের মেঘাই নৌ-ঘাটের নৌ-শ্রমিক আল-আমিন, বাদশা, সাইফুল ইসলাম, আজিবার, বাবলু, বেলাল, নাটুয়ারপাড়া নৌ-ঘাটের সেলিম, জামাল, হাসেম ও নজরুল ইসলাম জানায়, আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে প্রায় সারা বছরই নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন শুষ্ক মৌসুম শুরুর সাথে সাথেই যমুনা নদী বিভিন্ন এলাকায় শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। নৌকা চালানোর মতো কোনো জায়গা নেই। তাই নৌকা বিক্রি করে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় কাজ করে সংসার পরিচালনা করছি।

কাজিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, যমুনা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় কাজিপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কমপক্ষে এক হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলে আজ বেকার হয়ে পড়েছে। ওই সব নৌ-শ্রমিক ও এবং জেলেরা বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে হয়তো ওই সব শ্রমিক পুনরায় তাদের পেশায় জড়িয়ে পড়তে পারবে। এ জন্য নদী খনন করা জরুরি হয়ে পরেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে