মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্প অনুমোদন

0
328

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে জার্মানি থেকে অত্যাধুনিক মোবাইল হারবার ক্রেন এনে আগামী চার বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কাজটি সম্পন্ন হলে  বছরে ১২ কোটি টাকা আয় বাড়বে এ বন্দরের। এছাড়া বন্দরের জেটি সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগর মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে ‘মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প’নামে  ছয় হাজার কোটি টাকার আরেকটি বিশাল প্রকল্প  হাতে নেওয়া হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, মোংলা বন্দরে সক্ষমতা বাড়াতে নতুন করে আবার ৭৬৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের জন্য জলযান সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বন্দরের নিরাপদ চ্যানেল তৈরি, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনার সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্রেগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত “ মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ” শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে নিরাপদ চ্যানেল তৈরি, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা সহজ হবে। আগামী ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে বরাদ্দ করা ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।  একনেকে অনুমোদনের আগে প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১টি পাইলট মাদার ভেসেল, ২টি টাগবোট, ১টি সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ভেসেল ১টি সার্ভে অ্যান্ড রিসার্স ভেসেল, ১টি বয়া লেইং ভেসেল, ১টি প্রিন্টার ও ১টি ফ্যাক্সসহ কম্পিউটার এবং ফটোকপি মেশিন কেনা হবে।

একনেক সূত্রে জানা গেছে, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বন্দরসমূহে কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টার্মিনাল সম্প্রসারণ এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধির বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যার সঙ্গে এ প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সংগতিপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোংলা বন্দরে আসা ও ফিরে যাওয়া জাহাজগুলোর সুষ্ঠু হ্যান্ডলিং, দ্রুত পাইলটিং ও পাইলটদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিতকরণ, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে চালু হওয়া আন্তর্জাতিক এ সমুদ্রবন্দরটি ২০০১ সাল থেকে লোকসানে পড়ে মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয়েছিল। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরাও তখন এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে এ অবস্থা। গোড়ার দিকে বেশ কর্মচঞ্চল ছিল বন্দরটি। সে সময় নোঙর করা সারি সারি জাহাজের আলোর ঝলকানিতে রাতের পশুর নদীর দৃশ্য হয়ে ওঠে নয়নাভিরাম। পরে সেখানে নেমে আসে অন্ধকার। সেই অন্ধকার থেকে আবার আলোর জগতে ফিরেছে এ বন্দর। দিনের পর দিন জাহাজশূন্য থাকা পশুর নদীতে এখন দিনে ৭০ থেকে ৮০টি জাহাজ পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করছে।

এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, বন্দর সংশ্লিষ্ট নদীগুলোর নাব্যতা ঠিক রাখতে আমরা আউটারবারে ড্রেজিং করবো। সক্ষমতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু রয়েছে। আশা করছি, পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দর হবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের বড় কেন্দ্র।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে