অমাবস্যা তিথিতে আজ শ্যামা পূজা

0
382

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯ (নোঙরনিউজ) : হিন্দু সম্প্রদায় শিশির ঝরা হেমন্তের ঘনঘোর অমাবস্যা তিথিতে আজ রবিবার দীপাবলির আলোকে উদ্ভাসিত করবেন চারদিক। তাদের বিশ্বাস, এই মাহেন্দ্রলগনে আবির্ভাব ঘটবে কালীদেবীর। আজ মহা দীপাবলি উৎসব ও শ্যামাপূজা। ভূ-ভারত হয়ে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করবে দীপাবলি উৎসব।

ন্যায়ের জয় আর পারলৌকিক আঁধার সরিয়ে ফেলার কামনায় নৈবেদ্য দিবে কালীমাতার পাদপদ্মে। মঙ্গল শিখায় হিন্দু গৃহগুলো আলোকিত করে রাখা হবে। নিশি উপবাসের পর অন্নকুট মহোৎসব আর সন্ধ্যা আরতি দেওয়া হবে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে আজ সন্ধ্যায় দীপাবলি ও মঙ্গল শিখা প্রজ্বালন এবং দিবাগত রাতে শ্যামাপূজা। প্রসাদ বিতরণ, অতিথি আপ্যায়ন, আরতি। সোমবার কালী বিসর্জন। কেবল হিন্দু নয়, শিখ ও জৈনধর্মাবলম্বীরা আজ সন্ধ্যায় সহস্র প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভ দীপাবলি উৎসব উদযাপন করবেন। কাল ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান।

বাংলায় ‘দীপাবলি’, হিন্দিতে ‘দিওয়ালি’—যার সংস্কৃত অর্থ প্রদীপের সারি। যে প্রদীপের আলোয় দূর হয় সকল অশুভ শক্তি, ঘটে শুভ শক্তির আবির্ভাব। তাই এটা প্রদীপ জ্বালানোর সেই উত্সব। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র মতে, কালী হচ্ছেন অগ্নির সপ্তম জিহ্বা আর অগ্নি হচ্ছেন স্বয়ং ঈশ্বর; যা কালী বা শ্যামা নামে ভক্তদের কাছে উপস্থিত হন। মাতৃ আরাধনার আরেক রূপ হচ্ছে শ্যামাপূজা। দীপাবলি হচ্ছে এই পূজার অন্যতম আকর্ষণ। অন্ধকার বিনাশের প্রত্যাশায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই দিন ঘরে ও মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। হিন্দু বিশ্বাসে, এ প্রদীপের আলো যতদূর পর্যন্ত যায়, ততদূর পর্যন্ত কোনো অশুভ শক্তি আসতে পারে না।

হিন্দু পুরাণ মতে দেবী কালী—দুর্গারই একটি রূপ। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মাহাত্ম্য। কালীদেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুণ্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।

শ্যামাপূজা উপলক্ষ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আজ বিকালে সহস্র প্রদীপ জ্বালানো হবে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও শ্মশানে আজ মধ্যরাতে শ্যামাপূজা বা কালীপূজা হবে। বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কালীপূজা শুরু হবে। এদিকে কলকাতার বাইরে বিশাল ভারতে হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় পার্বণ এই ‘দিওয়ালি’। ’ধনতেরাস’ ঘিরে সেখানে চলছে বহুমাত্রিক মহাযজ্ঞ। ভারতীয় স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে।

কাল ভাইফোঁটা :শ্যামাপূজা বা কালীপূজার পরেই কাল ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। শুভদিনের পরম পবিত্র লগ্নে ভাইবোনের মধুর সম্পর্কের পুনঃনবীকরণ করে নেওয়া হয় প্রতি বছর। হিন্দুদের ভাইবোনের স্নেহ ভালোবাসার সম্পর্কের প্রকাশ ভাইফোঁটার আচার অনুষ্ঠানটি। কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয় তিথিতে বোন তার ভাইকে পরম যত্ন সহকারে একটি সুন্দর আসনে বসান। শিশির ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে হাতের তিন আঙুলের সাহায্যে বোন তার ভাইয়ের কপালে ধুয়ে দেয়। এই কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে একইভাবে চন্দন তিলক এঁকে দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে—‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যমের দুয়ারে পড়লো কাটা/যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/আমি দিই ভাইফোঁটা…।’

হেমন্তের পবিত্র শিশির দিয়ে বোন তার ভাইয়ের সব অশুভ, অমঙ্গল ও অকল্যাণকর শক্তিকে ধুয়ে দেয়। তখন ভাই বোনকে আশীর্বাদ বা তার মঙ্গল কামনা করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে