দক্ষিণমুখো গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

0
450

ঢাকা, ১৫ জুন, ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : ঈদ উত্সবে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণের মানুষের উপচে পড়া ভিড় সর্বত্র। তিল ধারণের ঠাঁই নেই লঞ্চ, বাস ও স্টিমারে। বিরূপ আবহাওয়ায় বুধবার রাত পৌনে তিনটা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিসি’র দু’টি জাহাজসহ বিভিন্ন ভায়া রুটের ২৪টি নৌযান ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে বরিশাল নৌ-বন্দরসহ অন্য বন্দরগুলোতে পৌঁছায়। এছাড়া বাস টার্মিনাল, ফেরি ঘাটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের। গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

বুধবার মধ্যরাত থেকে নানা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে যাত্রীদের। নৌ-বন্দরে নেমেই যানবাহন পেতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে যাত্রী সাধারণের। বাড়তি চাপের সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করছেন যাত্রীরা। তারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ডাবল কেবিন ১৬শ’ টাকার স্থলে ২২শ’ ও সিঙ্গেল কেবিন ৮শ’ টাকার স্থলে ১২শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ডেকে সাধারণ ভাড়া ২০০ হলেও এখন ২৫০ টাকা। যাত্রী বোঝাই এসব লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৫শ’ হলেও গত রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৮ সহস্রাধিকের বেশি যাত্রী নিয়ে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো টার্মিনালে নোঙর করে। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ যাত্রী বোঝাই এসব লঞ্চে নারী ও শিশু যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিলো সীমাহীন।

বরিশাল নৌ-টার্মিনাল সূত্র জানায়, লঞ্চগুলো যাত্রী বোঝাই করে আসলে এখানকার বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদেরও লাভ হয়ে থাকে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চগুলো টার্মিনালে ভিড়লেও তা দেখেও যেন না দেখার ভান করেন এখানকার কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে এখানকার কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এদিকে যাত্রীরা বরিশালে নামার পরই পড়ছেন বাড়তি ঝামেলায়। মধ্যরাত কিংবা ভোররাতে যে সময়ই হোক না কেন বরিশাল নগরীতে রিকশা-অটোরিকশা, আলফা মাহেন্দ্র কিংবা মাইক্রোবাসে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৫ গুণ বেশি। লঞ্চঘাট থেকে একটি রিজার্ভ অটোরিকসা সাধারণ সময়ের ৫০ টাকার ভাড়ার স্থলে রাতে আদায় করছে ২৫০ টাকা করে। বরিশাল থেকে গড়িয়ারপাড়ে যেতে হলে মাহিন্দ্রা জনপ্রতি ২০ টাকার বেশি খরচ হয় না। সেখানে জনপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ৬০ টাকা করে। রিজার্ভ গেলে হাকা হচ্ছে ৪শ’ টাকা। ভাড়া নিয়ে ঘরমুখো যাত্রীদের দর-কষাকষি করতে দেখা গেলেও অবশেষে বাড়তি ভাড়া দিয়েই তাদের যেতে হয়েছে গন্তব্যে।

সুন্দরবন লঞ্চের যাত্রী ঢাকা থেকে বরিশালে আসা আনিসুল কিবরিয়া নামে এক চাকরিজীবী জানান, স্ত্রীকে নিয়ে ঈদ করতে বরিশালে এসেছেন। ভোররাতেই অনেকটা বাধ্য হয়ে লঞ্চ থেকে নেমেছেন। নগরীর কাউনিয়া এলাকায় যেতে ৫০ টাকার ভাড়া এখন সাড়ে ৪শ’ টাকা। মাহিন্দ্র (থ্রি-হুইলার) চালক জানান, মালিক সমিতি ও ট্রাফিক পুলিশকে দৈনিক ভিত্তিতে দু’শ টাকা বাড়তি দিতে হয়। তা না হলে লঞ্চঘাট এলাকা তো দূরের কথা বরিশাল নগরীতেই গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই বাধ্য হয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কবির হোসেন জানান, বুধবার রাতে ভায়া রুটসহ ২৪টি নৌ-যান যাত্রী নিয়ে নৌ-বন্দরে পৌঁছেছে। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, তারা ঈদ-কোরবানী ব্যতীত সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক কম টাকায় যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। কেবল ঈদ-কোরবানী মৌসুমে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাদের বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে গতকাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়। পথে পথে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কোথাও আবার অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে