গ্রেনেড হামলার রায় শিগগিরই : প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

0
470

ঢাকা, ১৫ মে ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার রায় শিগগিরই ঘোষণা হবে এবং এই জঘণ্য হামলার জন্য দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি ভোগ করবে।

তিনি বলেন, ‘এই হত্যার বিচার চলছে। আমি আশা করবো তাড়াতাড়িই এই বিচারের রায় হবে এবং এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা কঠিন শাস্তি পাক আমরা সেটাই চাই। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের মাঝে আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তরকালে একথা বলেন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত-আহতদের পরিবারের সদস্যদের ৬৯ জনের মধ্যে এদিন অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়। এছাড়া, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মায়া ঘোষ এবং সাবেক কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা মোশাররফ হোসেন ও আর্থিক সহযোগিতার চেক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটাতেই এই জঘন্য ঘটনা ঘটনো হয়েছে। ‘এটা স্পষ্ট যে বিএনপি তখন ক্ষমতায়। খালেদা জিয়া, তার দল,তার ছেলে এবং তার কেবিনেটের মন্ত্রী পর্যন্ত জড়িত,’অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তারপর আলামতগুলো তারা নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করলো এবং জজ মিয়া নামে একটা নাটক করে এই ঘটনাকে অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করলো। একটা দলকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই ছিল বিএনপি’র উদ্দেশ্য। ’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, সেদিন (২০০৪ সালের ২১ আগস্ট)বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে বোমা হামলার প্রতিবাদে সন্ত্রাস বিরোধী র‌্যালি হচ্ছিল।
তিনি বলেন, সেখানে দিনে দুপুরে এভাবে যে গ্রেনেড হামলা হতে পারে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। সেখানে আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হারাই এবং দুজন অজ্ঞাতনামা মারা যায়। আর আমাদের শতশত নেতা-কর্মীরা আহত হয়।

বোমার শব্দে তাঁর কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নেতা-কর্মীদের রচিত মানব ঢাল সেদিন প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু হানিফ ভাই সহ কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে ঘিরে রেখেছিল তাই আমার গায়ে কোন স্পিøন্টার লাগে নাই।’

প্রধানমন্ত্রী হামলার ধরনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে আর্জেস গ্রেনেড যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার হয় তাই এই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল, তাও দিনে দুপুরে। একটার পর একটা ১৩টা গ্রেনেড মারা হয়। এমনকি গ্রেনেড হামলার পর অন্য নেতা-কর্মীরা যখন হতাহদের উদ্ধার করতে গেছে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ার গ্যাস মেরেছে।

তিনি বলেন, এই রকম ঘটনা মনে হয় কেউ তখনো পৃথিবীতে শোনে নাই যে, এতবড়ো একটা গ্রেনেড হামলার পর এত সময় অতিবাহিত হলেও পুলিশ উদ্ধারকাজেতো আসলোই না উপরন্তু লাঠি চার্জ করলো, কাউকে পিটিয়েছে, কাউকে লাখি মেরেছে, টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। আমাদের নেতা-কর্মী যারা উদ্ধার করতে গেছে তাদের দিকে পাল্টা আক্রমন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, তিনি তখন বিরোধী দলের নেত্রী থাকা অবস্থায় তাঁকে হত্যার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। সরকারে যারা থাকে এবং তাদের ছেলে পেলে যদি ষড়যন্ত্র করে তাহলে একটা দেশের কি অবস্থায় যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী তখন আহতদের দেশে বিদেশে যেখানে পেরেছেন তাদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন উল্লেখ করে বলেন তখন অনেকেই তাঁদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকেও তাঁদের সাহায্য করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। যাদের অনেকেই এখনো শরীরে স্পিøন্টারের দু:সহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁছে রয়েছেন, অনেকে মারাও গেছেন যন্ত্রনা ভোগ করতে করতে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন মর্মে অভিযোগ করে বলেন, জিয়াউর রহমান যে জড়িত ছিল এতে কোন সন্দেহ নাই, কারণ আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক ও রশীদ নিজেরাই বিবিসিতে প্রদত্ত ইন্টারভিউতে বলেছে। কাজেই এই পরিবারটাই মনে হয় কেবল খুন-খারাপিই করতে পারে। আর কিছু জানে না।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সৈনিকদের হত্যা করেছে, দেশে ১৯টি ক্যু ঘটিয়েছে। সেনাবাহিনীর আকাশ-বাতাস তখন ভারি ছিল, বিধবার কান্নায়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় এতিমের টাকা আত্মসাতে বেগম জিয়ার পুনরায় কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এতিম খানার জন্য বিদেশ থেকে টাকা আসছে তাও আবার চুরি করে খেয়ে বসে আছে। ১০ বছর ধরে মামলা চললো। বিএনপি’র আইনজীবীরা এটা প্রমান করতে পারে নাই যে, এতিমের টাকা খালেদা জিয়া মেরে দেয় নাই বা আত্মস্যাৎ করে নাই। এরপর তার শাস্তি হয়েছে। তাকে আবার তারা (বিএনপি) বলে গণতন্ত্রের মা। এখানে গণতন্ত্র কোথায় প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে খুনীর মা আখ্যায়িত করে তার মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না বলেও উল্লেখ করে তিনি ’৯৬ সালে কৈাটারবিহীন নির্বাচন করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যাবার দেড় মাসের মধ্যে জনগণ তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে বলেও উল্লেখ করেন।

বিএনপি খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের মা আখ্যায়িত করায় এর সমালোচনা করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ভোট চুরিতে এক্সপার্ট, মানুষ খুনে এক্সপার্ট,দুর্নীতিতে এক্সপার্ট, কালো টাকা সাদা করে, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে সে আবার গণতন্ত্রের মা হয়। এটা বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে একটা তামাশা ছাড়া আর কিছুই না।’

তিনি তারেক রহমানের মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা আমেরিকার এফবিআইএর তদন্তে এবং সিঙ্গাপুরের ফেডারেল কোর্টে এ সময় ধরা পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেতো সাজাও পেয়েছে একটা মামলায় ১০ বছর এবং একটা মামলায় ৭ বছর কারাদন্ড এবং ২ কোটি টাকার দন্ড পেয়েছে।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের হাজার-হাজার নেতা-কর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন করেন তা খালেদা জিয়ার সরকারও অব্যাহত রাখে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদিকে তাঁর সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বাংলাদেশকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে বলেন, মাত্র নয় বছরে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি আমরা করেছি আর কেউ তা করতে পারেনি।

বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভেটি দিয়ে তাঁদের ক্ষমতায় এনছিল বলেই এতসব করা সম্ভব হয়েছে, বলেন তিনি। বিএনপি উন্নতি করতে পারেনি কারণ তারা রাজাকার আলবদর, আলশামস, জাতির পিতার খুনীদের ভোট চুরি করে এমপি, মন্ত্রী বানিয়ে দেশের ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল।

বিএনপি দেশের কল্যাণ চায় না এবং তারা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তাঁর সরকারের লক্ষ্য বাংলাদেশের জনগণের জীবন মান উন্নয়ন, আর জিয়া ও খালেদা জিয়ার শাসনকালকে দুর্দিন আখ্যায়িত করে তেমন দুর্দিন যেন বাংলাদেশে আর না আসে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের খুনি জালেম, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী, একদিনে যারা ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা করে, আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএম কিবরিয়াকে হত্যা করে, এদের হাতে যেন বাংলাদেশের ক্ষমতা না যায় ।’ বাসস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে