দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রভাবশালীদের হাতে জলমহালের নিয়ন্ত্রণ থাকা হাওড়াঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হাওড়বাসীর উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা ও নদীভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘হাওড়বাসীর জীবন-জীবিকা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (সিসিসিইআর) পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ প্রবাল সাহা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন ও ওয়ার্ল্ড ভিশন আয়োজিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান। গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে সিসিসিইআর।
পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, হাওড়ের সমস্যা এত জটিল যে, চাইলে আমরা সব সমস্যা একসঙ্গে সমাধান করতে পারব না। তাই আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সব নদীর ভাঙন আমরা রোধ করতে পারব না। আবার চাইলেও সব নদীর খনন আমরা করতে পারব না, কারণ আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা এ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নদী খননকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি।
দেশের উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সর্বস্তরে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে। আর ‘অপচয়’ যেটাকে অনেকে দুর্নীতি হিসেবে অভিহিত করে থাকেন, তা বন্ধ করা সম্ভব হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেন, হাওড়াঞ্চলে শস্যবীমায় কতটা কাজ হবে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ শুধু বীমা করলেই হবে না, বীমার টাকা বীমাগ্রহণকারীকে পরিশোধও করতে হবে। তাই হাওড়ের দরিদ্র মানুষের জন্য তা কতটা বাস্তবস্মত— সেটা নিয়ে আমাদের আরো চিন্তা করতে হবে। ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান, ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান শ্যাম সুন্দর, ওয়ার্ল্ড ভিশনের হিউম্যানিটারিয়ান অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক দোলন যোসেফ গোমেজ প্রমুখ।
গত বছর আকস্মিক বন্যায় হাওড়বাসীর জীবন-জীবিকা ও আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের সামগ্রিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ডিএফআইডির অর্থায়নে ও ইউনাইটেড নেশন্স অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেসের (ইউএনওপিএস) ব্যবস্থাপনায় ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এফএফআরপি) গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল ও ওয়ার্ল্ড ভিশন। এ পরিস্থিতিতে হাওড়বাসীর উন্নয়নে করণীয় নিরূপণে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় চারটি, দিরাই উপজেলায় তিনটি ও কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার দুটি কমিউনিটির মধ্যে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গুণগত মানের ভিত্তিতে পরিচালিত জরিপে কমিউনিটির মোট ১২৬ জন মানুষ ও স্থানীয় সরকারের নয়জন অংশ নেন। এর বেশির ভাগই হাওড়বাসীর উন্নয়নে জরুরি করণীয় হিসেবে বিকল্প কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ জোর দেন। এজন্য তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা স্থাপন, সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তার দাবি জানান। এছাড়া উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি না হওয়ার জন্য ‘ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা’কে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন তারা।