পাহাড় ধসে জানমাল রক্ষায় অননুমোদিত পাহাড় কাটা বন্ধ, ন্যাড়া পাহাড়ে গাছ লাগানো এবং ভূমি ধস কবলিত পাহাড়ি এলাকা চিহ্নিত করে মানচিত্রে প্রদর্শন করাসহ একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার।
পার্বত্য অঞ্চলের ভূমিধস পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে মঙ্গলবার সচিবালয়ে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন।
সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “পাহাড় ধসে যেন আর ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেব। ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সভা করেছি, সেটি একত্রিত করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আপনাদের কাছে পেশ করব।”
ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহযোগিতা, অননুমোদিত সব ধরনের পাহাড় কাটা বন্ধ করা, বালি উত্তোলন বন্ধ এবং পাহাড়ি অঞ্চলে চলমান সকল হাউজিং প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার প্রস্তাব এসেছে বলে জানান ত্রাণমন্ত্রী।
পাহাড় কেটে ন্যাড়া হয়েছে অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে মায়া বলেন, “এটা কিন্তু এক দিনে হয়নি। সেখানে যখন নতুনভাবে বসতি স্থাপন হল, তখন থেকেই কিন্তু ন্যাড়া হওয়া শুরু হয়েছে।
“এখন আমাদের যে পরিকল্পনা- আমরা গাছ লাগাব, প্রচুর পরিমাণে প্রত্যেকটা পাহাড়ের গায়ে আমরা গাছ লাগাব, আমরা মোটামুটি সিদ্ধান্তে এসেছি। এক দিনে তো গাছ বড় হবে না, গাছ লাগাব আমরা।”
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের পাহাড় আর অন্যান্য দেশের পাহার কিন্তু এক প্যাটার্নের না, আমাদের পাহাড় কিন্তু এখনও মাটিতে। বিগত ৫০ বছরে নাকি একটানা এত বৃষ্টি হয়নি। পাহাড় বৃষ্টির ধারণক্ষমতা রক্ষা করতে পারেনি।
পার্বত্য এলাকায় এবারের বর্ষায় পাহাড় ধস পার্বত্য এলাকায় এবারের বর্ষায় পাহাড় ধস “পাহাড়ে গাছ নাই, অপরিকল্পিত কিছু রাস্তাঘাট করা হয়েছে সব কিছু মিলিয়েই এই কাজটা হয়ে গেছে। আমরা পরিকল্পনামাফিক এটা করতে চাই।”
এসব প্রস্তাবের বাইরেও ১৮টি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে মায়া বলেন, “সেগুলো একত্রিত করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
“এ ধরনের পাহাড়ি ঢলে বা অতি বৃষ্টিতে আর যেন মানুষের জানমাল ক্ষতি না হয় সেজন্য সূদুর পরিকল্পনা নিতে চাই।”
গত সপ্তাহে প্রবল বর্ষণে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামসহ দেশের ছয় জেলায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। এর আগে পাহাড় ধসে ২০০৭ সালে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
পাহাড়ে গাছ নিধনসহ বসতি স্থাপনের জন্য কেটে ন্যাড়া করায় বৃষ্টিতে ধসের ঘটনা ঘটছে বলে পরিবেশ নিয়ে কাজ করাদের অভিযোগ।
এবার পাহাড় ধসে এত প্রাণহানির পর করণীয় ঠিক করার পাশাপাশি পাহাড় নিয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনীয় ও কৌশলগত ব্যবস্থা নেওয়া, জরুরিভিত্তিতে ভূমি ধস কবলিত জেলা ও তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকাগুলোকে জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে মানচিত্র প্রদর্শন করার বিষয়েও সভায় প্রস্তাব এসেছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মায়া।
তিনি বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর বিপদের সম্ভাবনা নিরূপণ করে এর মাত্রা অনুযায়ী তা পাহাড়ি বসতি এলাকায় মানচিত্রে প্রদর্শন করা, একটি শক্তিশালী ভিজিলেন্স টিম গঠন, যেসব পাহাড়ের পাদদেশের ঢালু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী গাইড ওয়াল, পানি নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর তৈরি, দুর্যোগ কবলিত মানুষদের যেখানে আশ্রয় দেওয়া হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।”
পাহাড় ধস ঠেকাতে বিএনপি সরকারের সময় পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা চাপা পড়ে ছিল জানিয়ে মায়া বলেন, “আমরা বাস্তবমুখী কর্মসূচি নেব।”
পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কী পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা দরকার তা হাতে পেলেই করা হবে, আমাদের হাতে সব কিছুই মজুদ আছে।”
জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হল না কেন- এমন প্রশ্নে মায়া বলেন, “দেশে ১৭ কোটি মানুষ। তিন জেলার মধ্যে একটি জেলায় ৮০ হাজার পরিবার, একটি জেলায় ৭০ হাজার আর আরেকটি জেলায় ৬০ হাজার পরিবার। লোকসংখ্যা সব মিলিয়ে হবে না এক কোটি বা দেড় কোটি…।”
পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ছয় জেলায় জন্য এক হাজার টন চাল, ৮৪ লাখ টাকা, ৫০০ বান্ডিল টিন এবং ঘর তৈরি জন্য বান্ডিল প্রতি ৩ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ত্রাণমন্ত্রী।
৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সামনে যেহেতু ঈদ, পূর্বাভাস রয়েছে আরও বৃষ্টি হতে পারে। তাই এই মানুষদের আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। তাই চিন্তা করেছি, তারা যদি স্বেচ্ছায় ঘরে ফিরে না যায়, আমরা আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করব।”
ত্রাণসচিব শাহ কামাল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।