দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করুন, কোস্টগার্ডকে প্রধানমন্ত্রী

    0
    531

    {CAPTION}
    ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭, নোঙরনিউ ডটকম: দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যদের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে তার সরকারের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদ্য আমদানিকৃত জাহাজ ‘সিজিএস সৈয়দ নজরুল’ ও ‘সিজিএস তাজউদ্দীন’-এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমায় বাংলাদেশের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর (সমুদ্র জয়ের পর) সমুদ্র সীমার নিরাপত্তা দিতে কোস্টগার্ডকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আপনারা দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। … কোস্টগার্ডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে আমার সরকার সকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও নিরাপত্তার বিধানের মাধ্যমে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্ন ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’ জঙ্গি দমনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ডকেও ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে তার এখতিয়ারাধীন এলাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী সে সময় তার সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের বর্তমান সরকার কোনো প্রকার ছাড় দেবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালে ইতালি সফরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ইতালিয়ান সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারপর ‘জি টু জি’ চুক্তির মাধ্যমে ইতালিয়ান নৌবাহিনীর দেওয়া ৪টি করভেট অফশোর প্যাট্রল ভেসেলে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, এই ৪টি জাহাজকে জাতির পিতার বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর শহীদ চার জাতীয় নেতার নামে নামকরণ করে সম্মান জানিয়েছি। আজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং সিজিএস তাজউদ্দীনকে কমিশন করা হলো। এ বছরই ইতালি থেকে আসার পর অপর দুটি জাহাজ সিজিএস মনসুর আলী এবং সিজিএস কামারুজ্জামান কমিশন করা হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং সিজিএস তাজউদ্দীন’র দুই কমান্ডারের হাতে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করে জাহাজ দুটি কমিশনিং করেন। এর আগে কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী পরে সদ্য কমিশন পাওয়া জাহাজ দুটি ঘুরে দেখেন এবং এ উপলক্ষে সিজি বার্থ চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী একটি গাছের চারাও রোপণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোস্টগার্ডে জনবলের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমরা অবগত আছি। কোস্ট গার্ডের কার্যপরিধি এবং দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বৃদ্ধির সাথে জনবল এং সমুদ্রগামী বড় জলযান বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।’ জনবলের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমাদের সুবিশাল সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকায় জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ অবদান রাখছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই বাহিনীর সদস্যদের সততা, দায়িত্ববোধ, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দূরদৃষ্টি এবং কর্মদক্ষতায় উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টগার্ড এখন আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য আজ একটি স্মরণীয় দিন। আজ বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বহরে গভীর সমুদ্রে টহলদানে সক্ষম ২টি অফশোর প্যাট্রল ভেসেল সংযুক্ত হলো। জাহাজগুলোর কমিশনিং এ বাহিনীর কার্যক্রম সম্প্রসারিত ও গতিশীল করবে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সৃষ্টি এবং বিকাশের আওয়ামী লীগ সবসময় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনীত বিলের কারণেই বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর কোস্টগার্ডের জোনাল কার্যালয়ের জন্য ভূমি প্রদান, অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরনের বোট হস্তান্তর করি। এভাবে উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের কার্যক্রম চালু করি। গত ৮ বছরে কোস্টগার্ডের স্টেশনসমূহে অবকাঠামোসহ ৩০টি কোস্টাল সাইক্লোন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার তৈরি করেছি।’ এ ছাড়া বিভিন্ন আকারের ৪৮টি প্যাট্রল বোট নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্টগার্ড বেইসসমূহে অফিসার ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস, প্রশাসনিক ভবন ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে সর্বমোট ৭টি টহল জাহাজ, ১টি ফ্লোটিং ক্রেন এবং ২টি প্যাট্রল বোট তৈরি হচ্ছে। যা অচিরেই কোস্টগার্ড বহরে যুক্ত হবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোস্টগার্ডকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে তার সরকারের পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন এবং রাজস্ব বাজেট হতে ৫ বছর মেয়াদে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা কোস্টগার্ডের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস তৈরির মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমি সিজি বেইস অগ্রযাত্রা নামে কমিশন করেছি।’ দেশের সমুদ্র বন্দর ও বহিঃনোঙ্গর এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের নিরাপত্তা প্রদানে কোস্টগার্ডের তৎপরতা আজ বহিঃবিশ্বেও সমাদৃত বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরো এর বিবেচনায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এখন নিরাপদ বন্দর হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, ‘স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দৃষ্টি এখন সমুদ্রের দিকে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে সমুদ্রসীমা যথাযথভাবে নির্ধারিত হওয়ায় নিজ জলসীমায় আমাদের অধিকার আরও সুদৃঢ় হয়েছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদী, সাগর, উপকূল এবং গভীর সমুদ্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অর্থাৎ ব্লু ইকোনমি কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সমুদ্র দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ কোস্ট গার্ড বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। গ্রীন ইকোনমির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে অঢেল সম্পদের ভান্ডার লুকিয়ে আছে। এই সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদেরকেই করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র বন্দর ও বহিঃনোঙ্গরের নিরাপত্তা বিধান, সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু দমন, নদী ও সাগরে চোরাচালান বিরোধী অভিযান, মানবসম্পদ পাচার রোধ, জাটকা নিধন প্রতিরোধ এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ডের টহল জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। চোরাচালান এবং অবৈধ মৎস্য আহরণ প্রতিরোধে কোস্টগার্ডের বার্ষিক সাফল্য আর্থিক মানদণ্ডে হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। প্রধানমন্ত্রী কোস্টগার্ডের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে তার আহবানে সাড়া দিয়ে জাহাজ সরবরাহ করায় ইতালি সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডায়াজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সেসময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, কূটনীতিকবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

    একটি উত্তর ত্যাগ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে