মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন ও মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি লিখেছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ নোবেল বিজয়ী। নোবেল পুরস্কারজয়ী ১৩জন, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ মোট ২২ জনের স্বাক্ষর করা চিঠিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, মিয়ানমারে জাতিগত নিধন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধতুল্য একটি মানবীয় বিপর্যয় বিস্তৃতি লাভ করছে। দেশটির রাখাইন প্রদেশে বিগত দুই মাসে সেনাবাহিনীর আগ্রাসনে ৩০ সহস্রাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটার প্রেক্ষিতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত আগ্রাসনকে রুয়ান্ডায় হুতু-টুটসি, সুদানের দারফুর সংকট এবং বসনিয়া-কসোভো সংকটের সঙ্গে তুলনা করা হয়। রোহিঙ্গাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়, অং সান সু চির কাছে বারবার আবেদনের পরও তিনি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ ও সম-নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। সু’ চি মিয়ানমারের নেত্রী এবং দেশটিকে সাহস, মানবিকতা ও সমবেদনার সাথে পরিচালনা করার দায়িত্ব তাঁরই।
রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার পথে সবধরণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার উদ্যোগ নিতে মিয়ানমার সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। ‘আমরা জাতিসংঘের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে মানুষ জরুরী সহায়তা পেতে পারে।সাংবাদিক ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের ও সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের উদ্দেশ্যে একটি নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক তদন্ত পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার সফরের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, জরুরী এজেন্ডা হিসেবে সংকটটিকে উপস্থাপনের জন্য আমরা নিরাপত্তা পরিষদকে বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি এবং জাতিসংঘ মহাসচিবকে জরুরি ভিত্তিতে সামনের সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমার পরিদর্শন করতে অনুরোধ করছি।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, হোসে রামোস-হরতা, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়াম্স, অসকার অ্যারিয়াস, জোডি উইলিয়াম্স, শিরিন এবাদি, তাওয়াক্কল কারমান, লেইমাহ বোয়ি, মালালা ইউসুফজাই; চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেলজয়ী স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, চলচ্চিত্র পরিচালক রিচার্ড কার্টিস, নারী অধিকার প্রবক্তা আলা মুরাবিত, দ্য হাফিংটন পোস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক অ্যারিয়ানা হাফিংটন, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, পল পোলম্যান, মো. ইব্রাহিম, জোকেন জাইট্জ ও মানবাধিকারকর্মী কেরি কেনেডি।