বাউল-সাধক মুক্তিযোদ্ধােদের সম্মাননা প্রদান

3
1473

{CAPTION}

নোঙরনিউজ ডটকম: মহান বিজয়ের মাসে “লালনপালন” নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে গত বছর ২৩ ডিসেম্বর ১৬, শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী স্বাধীনতা উদ্যানে বাউল মুক্তিযোদ্ধােদের এক সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান ও লালনগীতি সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ৩:০০ ঘটিকা থেকে সন্ধ্যা ৭:০০ ঘটিকা পর্যন্ত লালন গানের আসরে দর্শক ছিল ভরপুর। আয়োজনের বিশেষ পর্ব ছিলো বীর মুক্তিযোদ্ধা বাউল ও লালন অনুসারী সাধুদের সম্মাননা পুরস্কার প্রদান।

লালনপালন নামের বাউল সংগঠনের আহবায়ক মুসাদউন্নবী সৈকতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন সাধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সাধুকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে বাউল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সংস্কৃতি সেবক (বিকেএমইএ পরিচালক, অর্থ) জিএম ফারুখ, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লালন সংগঠক রফিকুল ইসলাম মজনু, অভিনেতা আশরাফ কবির এবং নদী গবেষক ও নোঙরের চেয়ারম্যান সুমন শামস।

অভিনেতা আশরাফ কবির বলেন আমাদের দেশীয় বাংলা বাউল সংস্কৃতি আজ ভিনদেশী কুসংস্কৃতির আগ্রাসনের কবলে পড়েছে! অথচ আমাদের বাংলাদেশের আছে অনেক কালের পুরোনো সভ্যতার ইতিহাস। আমাদের বাউল, ফকির, সূফী সাধকগণ এই দেশের মূল্যবান সম্পদ। আমরা দেশীয় সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে আমাদের দেশকে আরো এগিয়ে নিতে পারি। মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে আমরা আমাদের আদি বাউল ফকির লালনকে হারিয়ে ফেলছি। তাই আমাদের সংস্কৃতি বাঁচাতে আন্দোলন করছি আপনারাও যুক্ত হবেন আশাকরি।

{CAPTION}

সুমন শামস বলেন ফকির লালন এমন একটি নাম যা এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে আমাদের চার হাজার বছর পুরাতন বাংলার ঐতিহাসিক ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করছে। বিশ্বের যে কনো দেশ সূফী সাধক ফকির লালন সাঁই’র নামে বাংলাদেশকে বোঝে। ১৯৭১ সালে মাহান মুক্তিযুদ্ধে ফকির লালন সাঁয়ের অনুসারী বাউল সাধকরাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন বর্বর পাক হানাদারদের বাহিনীর বিরুদ্ধে। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধশেষে অসংখ্য শহিদের বিনিময় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অবশেষে বিজয়ী হয় আমাদের বীর বাউল মুক্তিযোদ্ধারাই। এই বিষয়টি ভাবলেই আমরা গর্বিত হই। তাই আমি মনে করি আজকের এই আয়োজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে এনং আগামীতেও রাখবে। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি এক শ্রেণীর বহুজাতিক বাউল সংস্কৃতি ব্যবসায়ীরা মানহীন বিদেশী বাদ্যয্যন্ত্রী দিয়ে বাংলা ভুলেগিয়ে ইংরেজি শিরনাম দিয়ে “ফোকফেস্ট” নামে বাণিজ্য চালাচ্ছে। আর বাদ পড়েযায় আসল গুণি সাধক, গায়ক ও অভিমানি বাউল।

প্রিয় বন্ধুগন, তাই দেশপ্রেমে যারা নিয়জিত হয়েছেন অথবা হবেন তাদের মনে রাখতে হবে যে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই, কোনো রকম অসম্মানিত হয় এমন কনো কথা বলতে নেই। কারণ তাঁরা আামাদের অহংকার। এই দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছেন এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ভুলে যাবার মতো নয়। আমরা তাদের সম্মানিত করবো তা না হলে নিজেই ছোট করা হবে।

{CAPTION}

আর এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক এসে ছিলো এই সোহরাওয়র্দী স্বাধীনতা উদ্যানে থেকে। ১৯৭১ সালে এই মাঠে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান প্রিয় মাতৃভুমিকে রক্ষা করার জন্য সারা দেশের মানুষকে জাগিয়ে তুলে ছিলেন এই মাঠ থেকে। অথচ দুঃখকর বিষয় হলো আজ বিজয়ের ৪৫ বছর পরে এই মাঠে আজ আমারা পরাধীন। কোনো এক রহস্যজনক কারণে গত দুই বছর থেকে কোনো মুুক্তমনের মানুষ মুক্তো ভাবে এখানে আসতে পারেনা। অথচ ঐতিহাসিক এই মাঠের প্রতি এই দেশের ১৭ কোটি নাগরিকের রয়েছে এক নস্টালজিক ইতিহাস চর্চার অধীকার। একজন লেখক এখানে লিখবেন, একজন শিল্পী এই মাঠে বিজয়ী গান গাইবেন, একজন চিত্রকর ছবি আঁকবেন, পথচারি আসবেন এটাতো খুব সাভাবিক ব্যাপার। একজন নির্মাতা এই মাঠে হাঁটবেন, কবি এখানে আসবেন, একজন মুক্ত মনের মানুষ এই মাঠে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা করবেন যে কোনো নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোরসহ এই দেশের যে কোন নাগরিক এই মাঠে আসবেন। এটা গণপ্রজাদের অর্জিত অধীকার। কিন্তু আজকাল সেই মাঠে সন্ধ্যা নেমে এলেই কারফিউ নেমে আসে। শতশত পুলিশের বাঁশি বাজতে থাকে আর দেশের সম্মানিত নাগরিকদের সাথে চলে এক দূর্ব্যাবহার যা এই সময়ের প্রজন্মের সংস্কৃতি চর্চা এবং বিকাশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা দেশের আগামী প্রজন্মে বেড়ে ওঠার জন্য মোটেই ভালো নয়। তাই আমি বলবো এই স্বাধীনতা উদ্যানের সান্ধ্য কালিন জরুরী অবস্থা তুলে নিতে সরকারের জরুরী পদক্ষেপ আশাকরি।

একনুজ্জামান জমিনের উপস্থাপনায় আসরে লালন গান করেন শরীফ সাধু, সাত্তার ফকির, লতিফ শাহ, জমিন সাধু, মিলন মন্ডল, আল আমিন। শেষে হুমায়ুন সাধুর ঘোষণার মাধ্যমে আসরের শেষ গান পরিবেশন করেন লতিফ শাহ। কণ্ঠে মিলন হবে কতো দিনে, আমার মনের মানুষের শনে… বন্ধুগণ, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের অহংকার। জয় গুরু।

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে